গুচ্ছ কবিতা- সুমিতা মুখোপাধ্যায়
গুচ্ছ কবিতা- সুমিতা মুখোপাধ্যায়

জন্ম ১৯৭৫ , কলকাতা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। বিশ্বভারতী থেকে স্নাতকোত্তর। পেশা অধ্যাপনা। প্রায় কুড়ি বছর নর্থ সিটি কলেজে পড়াবার পর, আপাতত শারীরিক অসুস্থতা হেতু সাময়িক অবসরে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও সাময়িকীতে নিয়মিত তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনলাইন সাহিত্যগ্রুপ থেকে প্রচুর সম্মাননা পেয়েছেন। জাতীয় কবি পরিষদ, আন্তর্জাতিক কবি পরিষদ থেকে সেরা লেখিকার সন্মাননাও। তাছাড়া তিনি কফি হাউস সাহিত্য পত্রিকারও সম্পাদক। নানাবিধ সমাজকল্যাণমূলক কাজে তিনি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত।
একটি অমোঘ ভবিতব্য
একটি প্রাচীন শহরের
শেফালি ঘেরা প্রান্তিক বাড়িটার মুখ থেকে
শেষ হাসিটুকু মুছে গেলে
আরেকটা প্রিয়তমা বিকেলের অপমৃত্যু হয়।
অদ্ভুত এক জঠর -অন্ধকারে
লেপ্টে থাকে
অগুনতি ভয়,
তবু,ঠায় দাঁড়িয়ে আমি
গুনে চলি টুপটাপ রাত্রির নৈঃশব্দ্য যত।
হলুদ আলোর আশ্লেষে তোমার প্রসাধিত মুখমন্ডল
বুক আর সর্বাঙ্গ জুড়ে
দীপাবলির রোশনাই লেগে থাকে
অচেনা চমকে।
বৈশাখী রোদ্দুরের মতো আমার
আজন্ম নাটুকে হাসির অন্তুালে,
একাকী বেদনাবৃত্তে
জেগে থাকে
সমবেত বাঁশগাছেদের প্রাজ্ঞ শোকগাথা
বিষাদের একান্ত কোরাস।
তোমাদের স্যাঁতস্যাঁতে প্রতীক্ষা আর
শত সহস্র চুম্বন জর্জরিত
এ শহর তখন
মৃত সন্তানদের ভিড়ে নিশ্ছিদ্র প্রকোষ্ঠ এক
মৃত্যবাহী ফ্যাকাশে জঠরে।
আজ আবারও ইথারে ভাসে এক প্রতিবাদী লাশ,
লাশের খবর ফুল মালা ঘৃধামাখা কিছু কবিতা
অতর্কিত মৃত্যুর…..
জন্মনিয়ন্ত্রণের গ্যাঁড়াকল ডিঙিয়ে
মহা মহা ভুলে কিম্বা লুকিয়ে,
কিম্বা
বৈধ তালিকাভুক্ত হয়ে জন্ম নেওয়া
অবশিষ্ট হাজারো মৃতপ্রায় সন্তানদের
শিয়রে আজ
লিখে যেতে চাই
বৈধ এক অমোঘ ভবিতব্য
তোমাদেরও এই মধ্যবিত্ত সুখ আর প্রত্যয়
মিথ্যার বালিয়াড়ি জুড়ে আঁকা রকমারি আলপনা যত
সব মুছে যাবে একদিন,
এই রক্তলাল ইতিহাসে
প্রবল পাষন্ড এক চাপাতির ক্রম আস্ফালনে।।
২
টু লেট
এই এক অন্যবৃষ্টি রাশি রাশি ঝরে অবিরল
স্রোতে ভাসে ঠমকে গরবে যত রাজহংসীর দল
কুঁচবরণের কন্যা মেঘ আবরণের কেশভার
ঢোলডগর প্রশ্ন করে বলো কন্যা বলো তুমি কার
সোনার পিত্তল মুর্তি সারি সারি বসে আছে- টু লেট
মুর্খ যুবক নয় ধূর্ত বণিক হাত নাচায় পুতুলে
মননে ক্যানসার তবু বিশ্বসুন্দরীর গর্বে ধনী
কন্যা অপজয় দেখে কাঁদে অন্ধ গান্ধারী জননী।।.
৩
তীর্থ ক্ষেত্র
স্বর্গ, আপনাদের স্থানে একটু বসি,
এতটুকু প্রাণ, এইটুকু শ্বাস নিয়ে
আমার সুমৃত্তিকার থেকে এতদূরে
এসে পড়লাম. দণ্ড দুইয়ের তরে
বিশ্রামের অনুমতি চাই; আরও পথ,
বাষ্প, উলঙ্গ পর্বতমালার অখন্ড
নীরবতা অনেক, ঘণ্টাধ্বনির মতো
আমার জন্য শূন্যে অপেক্ষা করে আছে.
পায়ের নীচের তীর্থ, তোমায় কীভাবে
প্রণতি জানাই, আমি পবন হয়েছি,
আমার বৃত্তান্তের আমি যে অনুপস্থিত,
আমার বৃত্তান্তের আমি যে অনুপস্থিত,
বহুকালের পাঁজর থেকে অন্তর্ধান
করে আমি যে এখন করজোড়ে ঘুরি
সংকটের আকাশে -আকাশে,ক্ষুধা এলে
মেঘ থেকে ঘাস টেনে এনে, ছিঁড়ে খাই।।
1 Comment
[…] গুচ্ছ কবিতা- সুমিতা মুখোপাধ্যায় […]