Email: info@kokshopoth.com
July 16, 2025
Kokshopoth

কবিতাগুচ্ছ- মোহনা মজুমদার

Jul 11, 2025

কবিতাগুচ্ছ- মোহনা মজুমদার

জন্ম কলকাতায় । অংকে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চার । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘পারাবার বেঁধে রাখি’ , ‘উৎসারিত ও সলিলোকুই’ , ‘বিহান আলোর লিপি’ , ‘যতটা অপ্রকাশিত’ । আজকাল, সংবাদ প্রতিদিন, ভারতীয় হাইকমিশন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভারতবিচিত্রা, কবি সম্মেলন, বাংলা লাইভ,দৈনিক স্টেটসম্যান,যুগসঙ্খ, নাটমন্দির, উজানস্রোত, অপার বাংলা, আবহমান, বান্ধবনগর, কারুকৃতি, গুহালিপি , বৃষ্টিদিন, শুধু বিঘে দুই , প্রভাস, সাতটি তারার তিমির ইত্যাদি বিভিন্ন প্রথম সারির পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন । অবসরে ভালোবাসেন গান শোনা ও রংতুলি দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটা। 

# ১

কালনাগিনী


মনসা মা আমার , দুধ কলা দিয়ে ঘরে ঢোকায় কালনাগিনী
মঞ্জুশ্রীর বেশে সে এখন বরাঙ্গের ভেতর রয়েছে গোপনে

এক্সিকিউটিভ লবণ উগড়ে সে ঘট পাতে যুদ্ধক্ষেত্রে

সমর্পণ নেহাতই এক হাস্যকর বিদ্রূপমাত্র
হিসহিস শব্দে বিষ ছড়ায় শান্তির জলে
আলো খায় , চাঁদ খায়

মৃতসজ্জায় ফেলে রেখে যায় আমার অসাড় দেহ 
সমাধির পাশে সান্ত্বনা পুরষ্কার যেন, দাঁতাল রিবনের মতো পেঁচিয়ে থাকে

ওগো মাতৃরূপ, কামিনী ফুলের বনে যুদ্ধ আটকাতে না পারো , বরাভয়টুকু দাও অন্তত
পূর্বাহ্নে বুঝিনি ধ্বংসের চোখ এতো ভয়ঙ্কর হয় লখিন্দর
দংশন গুলো ক্লিশে হতে হতে থেমে গেলো যেন উপকূলে

ভেলা অবধি সামান্যপথ

চারিদিকে শুধু পান্তাভাত হলুদ হয়ে শুকিয়ে আছে..

 

#২

অন্ধকারের সাঁকো

অসহায় অশনিসম্পাত। মেঘ নেই , বিভাজনের পূর্বে ভাঙন নেই কোথাও , তবু লিখে রাখো কোকিলের ডাক একাকী। অন্ধ মৌচাকে অবতীর্ণ হতে বেলা গড়ালো ; যেমন অজ্ঞাত কুয়াশার দ্বারে অনাবৃত দৌড় এসে বসেছে কখন , ছোবল উড়ে যায়, টিলায় টিলায় স্মিত গুঞ্জরণ । প্রতিধ্বনি শুনি! কেন যে এইসব আশ্চর্য মৌতাতের ভিতর শীতল ধ্বনিভষ্ম জেগে থাকে ? জীবন কেমন ইতিহাসের সিঁড়ি হয়ে আসে– উপরে উঠলে ধুলোয় পোড়ে চাঁদের স্মৃতি ! ধিকিধিকি আলো জ্বলে, পথ দেখায়
যে অন্ধকার আলো ফিরিয়ে দিতে জানে
তাকে কি চাইলেই মুছে দেওয়া যায়? সমবেদ হও
অকালজন্মা ভ্রূণ । চেয়ে দেখো , তারাদের ভীড়ে

দেবতা ও প্রার্থনা নির্বোধ শুয়ে আছে..

 

#৩

আগল ভেঙে

তরঙ্গে তরঙ্গে দৃশ্য জাগে , উদাসী মেঘের দিকে আজীবন

দীর্ঘশ্বাস পেরিয়ে ক্রমে ঘুমের নির্যাস লেপটে সুখী এক অচিন , হরিণীর মতো
চেয়ে চেয়ে দেখে শূন্যর বর্গ শূন্য হয় কেবল

এ মাটি এ পরাগকেশর অট্টহাস্যে হত্যা করে,ফিসফিসিয়ে শিল্প ভাঙে নরম মাংসে
তীব্র স্রোতের সন্ধানে বিকল সংলাপ , অপরিচিত গানের মতো খেলা করে পতঙ্গের আঘাতে

পেছনে অঙ্কুরিত ছায়া , অস্তিত্ব পীড়া দেয়
এই ভীত শ্লোকজন্ম নিমজ্জিত জলোচ্ছ্বাসে

তোমার ঘর আমার ঘরের পাশেই কিংবা বহুদূর
দূরত্বে কীই বা যায় আসে , টোকা দিলেই যখন খুলে যায় যতির আগল

নির্ভার ধাতুখণ্ডটি কি পড়ে থাকে তবে, সাবলীল ? কেননা সে জানে রক্তমাখা ভাতে কান্না সেলাই করা আছে

মাংস- মাংস জ্যোৎস্নাজলে মৃত্যুগন্ধ আমার ভেতর
কারা যেন খই-চন্দন পুড়িয়ে ছায়া কেটে

বলে গোপনে শাপলা ফুল, এসো..

 

#৪

ভ্রূণ

গোপনে জানাই
তোমাকে বোধি ভেবে যে শূন্যের জন্ম দিয়েছি
তা আসলে মুণ্ডসমেত রসক্ষুধা

চৈতন্য হারিয়ে সে এখন জন্মের প্রাগমুহুর্তে ফিরে যেতে চায়
মাতৃজঠর দেখবে বলে আবদার করে

শূন্য ভাঙে
নির্বাপন ভেদ করে জাগে ক্ষুধা, নীল জলরেখা বরাবর হাতকাটা হরিণ ।
এত তরঙ্গ , এত তোলপাড়
কে তুমি কুঠার হাতে ?

নগ্ন আর্তি ঠেলে ফকির বেড়িয়ে পড়ে পথে

হে আমার বিকলাঙ্গ সন্তান , শান্ত হও
তবে মাথা নত কোরোনা
অকপটে আজ বলি , জন্মপত্রে মুছে দিয়েছি বিপন্নতা । এ ধূলোর ভেতর কোথাও কোনো ক্লেদ জমা নেই । নেই দৃষ্টিবিভ্রমের ডোরাকাটা প্রতিকৃতি ।

এবার পোড়ো
অদাহ্য যা কিছু , এবার পোড়ো
গনগনে মাঝ দরিয়ায়..