তৃষ্ণা বসাক-এর কবিতাগুচ্ছ ( Poems by Trishna Basak)
তৃষ্ণা বসাক-এর কবিতাগুচ্ছ ( Poems by Trishna Basak)

তৃষ্ণা বসাক আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি বিশ্বস্ত প্রিয় নাম। জন্ম কলকাতা । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ই. ও এম.টেক.। সরকারি মুদ্রণসংস্থায় প্রশাসনিক পদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শী অধ্যাপনা, সাহিত্য অকাদেমিতে অভিধান প্রকল্পের দায়িত্ব – বিচিত্র ও বিস্তৃত কর্মজীবন। বর্তমানে পূর্ণ সময়ের লেখক ও সম্পাদক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রবন্ধ মিলিয়ে গ্রন্থ ১২-র বেশি। সাহিত্য অকাদেমির ভ্রমণ অনুদান, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার সহ পেয়েছেন অন্যান্য বহু পুরস্কার। হিন্দি, মালয়ালম, ওড়িয়া ভাষায় গল্প অনূদিত। মৈথিলী থেকে অনুবাদ ও কল্পবিজ্ঞান রচনায় সাবলীল ।
# ১
প্রণয় প্রণয় ওই পর-বাস
প্রণয় শিখেছি আমি, অন্তত প্রথম যুক্তাক্ষর,
প আর র দিয়ে, তাহলে তো পরও হতে পারে,
পর সে যে, তাই শুধু? সে যে পরঘরও হয়ে গেছে,
অন্য রমণীর ধন, যে তাকে রেখেছে তুলে তাকে…
কড়ির পুতুল নাকি? কাঠের চৈতন্য? তাই হবে,
মাটির জগন্নাথ, কত শত রথে ধুয়ে গেছে,
বেলকুঁড়ি মালাখানি ছাদ থেকে ছোঁড়া হয়েছিল,
সে মালা পড়বে তারই গলে গিয়ে, সে কি আমি জানি?
পড়েছিল, পরেছিল, তারপর খর শোক তাপে
শুকিয়েছে, শুধু আছে মৃদু আর মধুর সুবাস,
আঁখিজলে লেখা হল বঙ্গলিপি খাতা বুকে চেপে,
প্রণয় প্রণয় ওই পর-বাস, অধরা-অমৃত…
# ২
কাঁদো, পোকা কাঁদো
এই যে মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে চলে লাল পোকা, কালো পোকা; সোনালি পোকা কেবল ঘুরে ঘুরে মরে, মনস্থির করতে পারে না, কোন গাছের পাতা খাবে, এদের সমস্ত দিন ধরে পাখিপড়া, পোকাপড়ার মতো বোঝাই, যারা মাটিতে ঘুরছ, তারা একটু ঘাড় উঁচু করে তাকাও, যারা উড়ে বেড়াচ্ছ, তারা একজায়গায় একটু স্থির হয়ে বসো, দেখো তোমাদের চোখের সামনে দিয়ে আমার সমগ্র জীবন চলে যাচ্ছে, মীরা সেবাকেন্দ্রের গাড়ি চড়ে চলে যাচ্ছে আমার জীবন, যার মানে এতগুলো বছর, প্র্যাক্টিকাল খাতার মলাটে আগুনের আঁকিবুঁকি, টিফিনবাক্সে লুচির গর্তে জল ধরে রাখা, রিক্সার ভেজা প্লাস্টিক, ম্যাটাডোরের ড্রাইভারের পাশের সিট, ট্রেনের জানলার ধারের সিট, বাসের লেবু লজেন্স, অর্থাৎ পুরো জীবনটাই কেবল চলে যাওয়া, চলে যাওয়া।
তোমরা চলতে চলতে এক মুহূর্তের জন্যে দাঁড়াও, দেখো, কদমগাছের নিচ দিয়ে মীরা সেবাকেন্দ্রের গাড়ি আমার গোটা জীবনটা নিয়ে চুপচাপ চলে যাচ্ছে, কাঁদো, পোকা কাঁদো।
# ৩
নিরাময়ের অজস্র বেগুনি ব্রোশিওর
একটা কলাপাতা হাতির শুঁড়ের মতো আমার দিকে এগিয়ে এসেছে,
সারা রাত ধরে পড়া বৃষ্টির বিন্দু ফুটে আছে ওর শরীরে,
এই অরণ্যে একটা কুবো পাখি দিশেহারা হয়ে কী যেন খুঁজে বেঢ়ায়,
হঠাৎ হঠাৎ গ্যারাজের ছাতে উঠে সে অবিরাম ডেকে চলে –কুব কুব কুব্…
তার ডাক ডালিমগাছের আড়লে লুকিয়ে থাকা বেড়ালগুলোকে অস্থির করে তোলে,
তারা তখন এই পাড়ার প্রতিটা বাড়ির আলমারি হাঁটকে বেড়ায়,
আর মুখে করে নিয়ে আসে একটা লাল ব্রা, একটা কালো হ্যাঙ্গার
আর নিরাময়ের অজস্র বেগুনি ব্রোশিওর,
সেসব নিয়ে এই মেঘলা দিনে অরণ্য স্তব্ধ হয়ে আছে,
একা কুবো ডেকে যাচ্ছে কুব কুব কুব…