স্বপ্না সেনগুপ্তের গল্প
স্বপ্না সেনগুপ্তের গল্প

গার্হস্থ্য আর সাহিত্যচর্চা স্বপ্না সেনগুপ্তের জীবনে একাকার। এ বিষয়ে বিখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। পরিণত বয়সে লিটল ম্যাগাজিনের বন্ধুদের সহচর্যে লেখালেখির সূচনা। সহজ সরল জীবনের মায়া ও জটিলতার পাশাপাশি তথাকথিত পতিত নারীর জীবনকে মূর্ত করতে চেয়েছেন যথাযোগ্য সম্মানের সাথে। স্বপনচারিনী গল্পে নারীসঙ্গ বঞ্চিত এক পুরুষের জীবনের হাহাকার উঠে এসেছে এক নারীর কলমে।
স্বপনচারিণী
মিলিয়ে যাওয়া বিকেলে একটা খবরের চ্যানেলে টিভিতে সাপুড়ের বাঁশির সুরটা বাজছিল।
হিতু লাউঞ্জে সোফায় বসে খবরের কাগজটা দ্বিতীয়বার চর্বিত চর্বণের একঘেয়েমির কাজে ব্যস্ত। চোখ তুলে টিভির পর্দার দিকে তাকাতেই কর্ণেল রায় চৌধুরীর গর্জন —— অসহ্য !!! এসব বিজ্ঞাপন আইন করে বন্ধ করা উচিত।
বৃদ্ধাবাসের মহিলা সদস্যরা মুখ ফিরিয়ে নিলেন টিভির পর্দা থেকে। কেউ উলকাঁটায় মনোনিবেশ করলেন , কেউবা গল্পের বইয়ে অথবা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়।
কে যেন একজন বলল —— জাপানী তেল কিন্তু জাপানে তৈরী হয় না। এই কলকাতাতেই বাগুইহাটিতে তৈরী হয়।
কর্ণেল রায় চৌধুরীর কন্ঠ আবার ঘোঁত করে গর্জনের আভাস দিতেই আলোচনার মোড় অন্যদিকে ঘুরে গেল।
বাগুইহাটিতে ঊনিশ শো আটষট্টি সালে চাল কত সস্তা ছিল , কোলকাতার মানুষ তখন শীতকালে কেষ্টপুর , বাগুইহাটিতে পিকনিক করতে যেত কিনা আর বর্তমানে পৃথিবীর অর্দ্ধেক মানুষ বাগুইহাটিতে আর বাকি অর্দ্ধেক বেলঘরিয়ায় বাস করে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
হিতব্রত চ্যাটার্জী অর্থাৎ হিতু এই সুযোগে ডুবে গেল নিজের যৌবনবেলার সবুজ দিন গুলিতে। উত্তাল সেই সময়ে মিলন সমিতি ভেঙে বরিয়ে এসেছে নবীন সদস্যরা। তৈরী হয়েছে অভিযাত্রী সংঘ। পরিবার তন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসেও গ্যারেজ ঘরে ক্লাব প্রতিষ্ঠা হল ভট্টাচার্যদের বাড়িতে। আর কোনো বিপ্লব হোক বা নাহোক তাসের ব্রীজ বিপ্লব আর ক্যারাম বিপ্লব ঘটেছিল বিপুল ভাবে। এছাড়া ধনী অঞ্চলে শারদোৎসবের খ্যাতি প্রথম বছর থেকেই কলকাতায় নিজের আসন পাকা করে নিয়েছিল।
রবিবার সকালে ক্লাবে একপ্রস্থ গুলতানির পর দুপুরে আবার তাসের আড্ডা। যাকে বলে ব্রীজের নেশা সর্বনাশা। এর রসে যারা মজেছে তারাই জানে কী আকুল মাদকতা এই নেশায়।
প্রশান্তর আসতে একটু দেরী করছিল বলে সকলেই ওকে গালাগালি করছিল। বেচারী সদ্য বিবাহিত। তাছাড়া রবিবার দুপুরে একবার বাড়ি ঢুকলে আবার বাইরে আসা খুব সহজ নয় যৌথ পরিবারে।
যখন এল তখন সবাই একসাথে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
মিটমিটে শয়তান বিল্টু অভ্যস্ত হাতে তাস বাঁটতে বাঁটতে নিতান্ত উত্তাপহীন কন্ঠে বলল ——- ছেড়েদে ওকে , রবিবার দুপুরে একটু সাপ খেলিয়ে এল।
তাসের নেশায় একান্ত ব্যাকুল কেউ কথাটা তেমন করে খেয়াল করেনি।
প্রশান্ত হঠাৎ ব্যাঘ্র-বিক্রমে জুতসই একটা গালাগালি দিয়ে বিল্টুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হিতু এক ঝটকায় প্রশান্তকে সরিয়ে বিল্টুকে নিয়ে মুহূর্তে গ্যারেজের বাইরে। অন্যরা প্রশান্তকে সামলাচ্ছে হতভম্ব অবস্থায়।
বিল্টু খিক্ খিক্ করে হেসে বলে ——– শালা সাপ খেলাতে পারেনি তাই ক্ষেপে গেছে।
প্রশান্ত আবার ছুটে আসার আগেই হিতু বিল্টুর হাত ধরে দৌড় লাগায় লেকের দিকে।
এই সব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে হিতু খবরের কাগজ হাতেই আপন মনে হেসে ওঠে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে।
কর্ণেল রায় চৌধুরীর জলদগম্ভীর কন্ঠস্বর ফের গর্জন করে ——– হিতুবাবুর হঠাৎ এত হাসি পেল কীসে?
হিতুর বুকের ভিতরটা গুড়গুড় করে ওঠে। থতমত খেয়ে বলে —— ঐ আর কি , ছোট বেলার কথা ভাবছিলাম। তবুও বুকের ভিতর একটা ভয়ের ঘন্টা ঢং ঢং করে বাজতেই থাকে এবং কেবলই মনে হয় এই সব নয় , এরপরেও আরো অনেক আছে।
খবর শোনা আর রোজকার হিসাব যত্ন করে লিখে রাখা হিতুর বহু কালের অভ্যাস। সকালবেলা হিসাবের খাতা নিয়ে চেয়ার টেবিলে হিতু —–এমন সময় মেয়েটা এল। উজ্জ্বল শ্যামল বর্ণ , দোহারা গড়ন ,লম্বা বিনুনি পিঠের ওপর দুলছে —- বিনোদভাব সারা রাতের ধকলে কিছুটা এলোমেলো। মেয়েদের বাসি কেশ সজ্জায় একটা বিশেষ সৌন্দর্য আছে। মুখমন্ডলকে ঘিরে চূর্ণ কুন্তলের শোভা। সেই সাথে জবাকুসুম তেল আর বসন্ত মালতীর এবং মেয়েলি ঘামের আদিম মিশ্র গন্ধ। আঁটোসাটো সেই গড়নে মোহিত হিতুর বাহাত্তুরে শরীরে এক অদ্ভুত জাগরণ। যেন নবীন যৌবনের স্পর্শ। দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে হিতু স্বগতোক্তির মত বলতে থাকে —— রাতে আসবি একবার। রোজ নয় , মাঝে মাঝে। বুড়ো হয়েছি —- রোজ পারব না। যদি আসিস , আমি মাসে তিন হাজার দেব।
মেয়েটা হিতুর কথা শুনে একটু থমকায়। তারপর এমন ভঙ্গীতে বালতি আর ফুলঝাড়ু নিয়ে চলে যায় যে হিতুর বুকের ভিতর কে যেন হাতুড়ি পিটতে থাকে। সে চোখ তুলে আয়নার দিকেও তাকাতে পারে না।
সলিল সাহা। এই বৃদ্ধাবাসের মালিক। পাকা ব্যবসাদার অথচ সুরুচি সম্পন্ন। কদিন আগেই এক বিকৃত কামাতুর বৃদ্ধকে বহিষ্কার করেছে তার আবাস থেকে। সে নাকি ঘাটের পথে কলাগাছের আড়াল থেকে এক প্রবীণাকে তার পৌরুষের অহংকারটি প্রদর্শন করেছিল।
এখন অসহায় হিতু ভাবে মুখের কথা আর হাতের ঢিল একবার বেরিয়ে গেলে ফেরানোর আর উপায় নেই। কে জানে কি আছে কপালে !!!!
হিতুদের বাড়িটা ছিল অঞ্চলে বিখ্যাত মার্কসবাদী পরিবার। বাড়ির সকলেই কোনো না কোনো ভাবে পার্টির সাথে যুক্ত। বাড়ি নয়তো যেন এক হট্টমেলার দেশ। সে সময়ের কমিউনিষ্ট নেতারা একটা কাজ ভারী ভালো পারত , সেটা হল বস্তি সংগঠনের সাথে সাথে বস্তিতে স্কুল স্থাপন করা আর পরিবারের বৌ মেয়েদের সেই সব স্কুলে চাকরি দেওয়া। ফলে হিতুদের বাড়িতে মা , কাকিমা , পিসি সবাই স্কুল টিচার।
বাবা , কাকা চাকরির সাথে সাথে পার্টির কাজে সদা ব্যস্ত। সারাদিন বাড়িতে নেতাদের আনাগোনা। এ বাড়িটা যেন দ্বিতীয় পার্টি অপিস। সকলের জন্য অবারিত দ্বার। সদর দরজা সারাদিন হাট করে খোলা। বেশ লম্বাটে একটা জমির ওপর ব্যারাক বাড়ির মত বাড়ি। মাঝে সিঁড়ি রেখে দু’দিকে তিনটে বিশাল বিশাল ঘর। ঠাকুরদাদার হৃদয়ের মত লম্বাটানা বারান্দা লাল সিমেন্টের। এটুকুই এবাড়ির বিলাসিতা। আর কোনো ছিরিছাঁদ নেই।
চিলে কোঠার ঘরে হিতুর থাকবার ব্যবস্থা। অ্যাসবেস্টারের চাল। পশ্চিম খোলা সেই ঘরে দুঃসহ গরম সহ্য করে হিতু ছাড়া আর কেউ বাস করতে পারে না।
হিতুদের এই হট্টমেলার দেশের একমাত্র কান্ডারী মমতাদি। একজন মাত্র সহকারিণীকে নিয়ে এই চোদ্দজনের সংসার তরণী বয়ে নিয়ে চলেন তিনি।
হিতুরা চার ভাই একবোন। বোন সবচেয়ে ছোট। অতি আদরে বখে যাওয়া। লেখা পড়াতেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি।
ভালো রেজাল্ট করেও হিতুদের বাড়িতে কেউ সাইন্স পড়তে ছোটেনি। বড়দা মেজদা ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স পড়ে ব্যাঙ্কে চাকরি করে আর জমিয়ে ইউনিয়ন করে। সেজদা পলিটিক্যাল সাইন্স নিয়ে পাস করে ফুড করপোরেশনে আছে।
এ বাড়ির ছেলেরা সবাই হাওয়াই চটি ফটফট করে পাড়ার চায়ের দোকানে দেদার আড্ডা মেরেছে , প্রচুর মানুষের সঙ্গ করেছে আবার ফটাফট পরীক্ষা পাশ করে চাকরিও পেয়ে গেছে। লেখাপড়া বিষয়টা এ পরিবারে নিশ্বাস নেবার মতই সোজা।
কোনোরকম হা-হুতাশ অথবা হম্বিতম্বির ছায়া মাত্র নেই। হিতু হায়ার সেকেন্ডারীতে ইতিহাসে ভালো নম্বর পেয়েছিল। বাবা বলল ——- ইতিহাসে অনার্স পড় পাড়ার কলেজে। সময় ও পয়সা দুই-ই বাঁচবে , চাকরিও পাবি তাড়াতাড়ি। সত্যি পাশ করার সাথে সাথেই স্কুলে চাকরি। তারপর এম.এ. বিটি ইত্যাদি।
মমতাদি হিতুকে বড় ভালোবাসে। সুন্দরবনের গোসাবায় বাপের বাড়িতে রেখে এসেছে একমাত্র কন্যা ঝর্ণাকে। বিধবা যুবতী এই নিরাপদ আশ্রয়টুকু ভালোবাসে প্রাণের অধিক।
দাদু-ঠাকুমার ঘরের পাশে বারান্দার উত্তর অংশে একটা গ্রামীণ দড়ির দোলনা সযতনে টাঙানো। দুপুরবেলায় ঐ দোলনায় শুয়ে থাকা মমতাদির জীবনের একমাত্র বিলাস।
নিচতলায় থাকলে হিতুও ঐ দোলনায় দুলতে দুলতে ইতিহাসের বই-এ মগ্ন থাকে।
বছরে দু’বার হিতুদের বাড়িতে আসে ঝর্ণা। একবার পূজোর সময় আর একবার গ্রীষ্মের ছুটিতে। বাড়ির সকলের কাছে ঝর্ণা পায় অপার ভালোবাসা। বাবা কখনো ডাকে —- তরলিতচন্দ্রিকা কখনো বা -চন্দনবর্ণা।
অল্প বয়স থেকেই ঝর্ণাকে সাইকেলে করে লেকে নিয়ে গেছে হিতু। কেন যে ওর সহচর্য বিশেষ ভাবে কাম্য ছিল সেই বোধ তখনো অপরিস্ফুট। তারপর অতি ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে সেই অপার্থিব অনুভূতি , হয়তো তাদের দুজনের-ই অজান্তে। বাড়ির লোকেরা এই বন্ধুত্বের দিকে তাকিয়ে দেখত না অথবা বলা যায় তাকিয়ে দেখার সময়ও তাদের ছিল না।
খুব-ই আনন্দের সাথে অতি শ্লথ গতিতে এগিয়েছে তাদের সম্পর্ক। বি.এ.পড়ার শেষ দিকে হিতুর সাথে ঝর্ণার শারীরিক সম্পর্ক তৈরী হয়। অনেক অনেক সময় নিয়ে দুটো শরীরের চেনা জানা হয়েছে। বলা যায় প্রখর গ্রীষ্মের একদুপুরে নারী শরীরের রহস্য হিতুর কাছে উন্মোচিত হল। মাত্র একুশ বছরের একটি ছেলের ইচ্ছা হয়েছিল এই অপার আনন্দের কথা চিৎকার করে প্রকাশ করে কিন্তু সে নিরুপায়।
বন্ধুদের সামনেও তাকে চুপ করে থাকতে হয়েছে। ঝর্ণাকে দেখলেই হিতুর শরীর মিলনের জন্য তৈরী হয়ে যেত। ঝর্ণা দুষ্টুমিষ্টি স্বরে বলত —-ঝাক্কাস !!!!! কে জানে কথাটার মানে কী! তবে ঝর্ণার গ্রাম্য কন্ঠস্বরে কথাটা এত সুললিত লাগত ——- এমন একটা আবেশ এনে দিত যে এই পৃথিবীর সকল পুরুষের থেকে তখন নিজেকে সুখী মনে হয়েছিল।
দুটি নবীন মন আর আকুল শরীর মিলিত হয়েছিল। অপূর্ব সুন্দরী সেই গ্রাম্য বালিকা ছলা-কলা-পটিয়সী কোনো নারীর মত আদায় করতে চায় নি কোনো কথা। দুটি শরীর শুধু কথা বলেছে , কেউ কারো কাছে বিশেষ কিছু প্রত্যাশা না করেই। শেষ দিকে ঝর্ণা রাতেও আসতে শুরু করেছিল। মমতাদি হয়তো কিছু আন্দাজ করে থাকবে। গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হবার আগেই ঝর্ণার মামা ওকে গোসবায় নিয়ে যায় আচমকা।
বিদায়ের বাঁশি বাজল না তেমন করে। শেষ হল সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ এক শরীর চেনার খেলা। শুধু হিতুর সারা জীবনে রেখে গিয়েছিল এক বুনো কুসুমের অচেনা সুবাসের সাথে জবাকুসুম তেল আর বসন্ত মালতীর মিশ্র গন্ধ।
পূজোর ছুটিতে আবার এল ঝর্ণা। উৎসবের পরিবেশে মেলামেশা হতে পারত আরো আবাধ কিন্তু মমতাদির কড়া নজর ছিল মেয়ের ওপর। অনেক আত্মীয় স্বজনের ভিড়ে চিলে কোঠার ঘরটাও আর নিরিবিলি ছিল না।
লক্ষ্মী পুজোর পরদিন মমতাদি ঝর্ণাকে নিয়ে চলে গেল। পরের অগ্রহায়ণ মাসে ঝর্ণার বিয়ে হয়ে গেল গ্রামেরই এক প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকের সাথে।
অনেক উপহার সমেত হিতুকেই যেতে হয়েছিল সেই বিয়েতে। কারণ বাড়িতে আর কারো সময় নেই , আর হিতু তো বি. এ.পরীক্ষা দিয়ে বসে থাকা বেকার যুবক। চাষাভূষা এক গ্রামীণ শিক্ষকের প্রতি হিতুর একদিকে অকারণ একটা ভয়ানক রাগ আর অন্য দিকে অপরিসীম শ্রদ্ধা। কী সরল আপ্যায়ন আর পরিপূর্ণ জ্ঞান। কোনো পল্লবগ্রাহিতা নেই। স্বচ্ছ অথচ পরিশুদ্ধ নিরহংকার চেতনা ভান্ডার। হালের বলদ নিয়ে অনায়াসে মাটি চাষ করে আবার স্কুলের বাচ্চাদের ভালোবাসে আপনজনের মত। নদী , জল , জঙ্গল , মাটি আর মানুষের সাথে কী নিবিড় সম্পর্ক। নববিবাহিতা পত্নীকে নিয়ে কত খুশীর এক জীবন। হিতুর মনে হল এই গ্রামীন জীবনেই ঝর্ণাকে মানায় ভালো।
ওর স্বামী প্রীতি দেখে অকারণ একটা অন্ধ রাগ হৃদয় বারবার ক্ষতবিক্ষত করলেও অপমান বোধটা ফেরার পথে ফিকে হতে থাকে এবং মাতলা নদীর উত্তাল ঢেউ অতিক্রম করার সময় মনে হয় —– এও সব নয় , জীবন এখনো অনেক বাকি।
সকালে বাসন্তী কেবিনের সামনে গাছতলার আড্ডায় আর সুখময় দিলীপ কি যেন একটা গুজগুজ ফুসফুস করছিল। বাতাসে পূজোর গন্ধ লেগেছে। শরৎ কালের একটা ফুরফুরে মন সকলের।
সুখময়কে হিতুর পছন্দ নয়। সঠিক কোনো কারন নেই। সুখময় দারুণ সুপুরুষ আর বিশাল বড়লোক। খালের ধারে ওদের বিশাল সাবান কারখানা। দিলীপদেরও গেঞ্জীর কারখানা। বিশ্বকর্মা পূজো এদের বিরাট উৎসব। কলকাতার পূজোর উৎসবের সূচনা লগ্ন । হিতু অপেক্ষা করছিল দিলীপের বাড়িতে ওর জন্য। দিলীপের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এই সব বড়মানুষের বাড়ির উৎসব হিতুকে ভীষণ টানে। এই বিশাল আয়োজন আর সীমাহীন জাঁকজমক। হিতু লেপটে থাকে দিলীপের সাথে।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে দিলীপদের বাড়ি সকলের নিমন্ত্রণ। দিলীপ বলে পরশু বিকেলে একবার আসবি সুখময়দের বাড়িতে একটা মজা হবে। ওদের বাড়ির সকলে দার্জিলিং বেড়াতে যাচ্ছে।
সুখময়দের বাড়ি যাবার একটা আকাঙ্ক্ষা হিতুর হৃদয়ে লালিত ছিল বহুকাল। সে রাজি হল সহজেই।
শুনশান বিশাল একটা বাড়ি। ওর বাবা কাকার মস্ত সাজানো অফিস ঘর। পাশেই দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রাম কক্ষ। ওদের চাকর একটি মেয়েকে নিয়ে ঢুকে গেল বিশ্রাম কক্ষে।
দিলীপ হাসছিল খিকখিক করে। চাকরটি চলে যেতেই প্রথমে সুখময় এবং তারপরে দিলীপ মিলিত হতে ঢুকল পাশের ঘরে। তৃতীয় অধিকার হিতুর যেহেতু এই আয়োজনে সে একান্তই রবাহুত। হিতুর সমস্ত মন একটা প্রচন্ড বিবমিষায় গুলিয়ে উঠল। ও কিছুতেই ঐ বিশ্রাম কক্ষে মেয়েটির কাছে যেতে পারলো না। দুবার ব্যবহৃত একটা উলঙ্গ নারী দেহ কল্পনা করে ওর সমস্ত মন যৌনচেতনাহীন হয়ে পড়ল। মনে হল মানব দেহ এমন বেসুরে বেপর্দায় কখনো ঝংকার তুলতে পারে না।
মেয়েটি বেরিয়ে গেল হাতে এক বাক্স গ্লিসারিন সাবান। হয়তো প্রাপ্য টাকার সাথে এটা উপরি পাওনা।
সুখময় আর দিলীপ হিতুর ব্যর্থতায় হা হা করে হাসে। দিলীপ হিতুর পাছায় লাথি মারে। ভাবে হয়তো হিতু পুরুষত্বহীন। হিতুর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ঝর্ণার কথা। কিন্তু পারিবারিক মূল্যবোধে আটকয়। একথা উচ্চারণ করা মানে মমতাদি আর ঝর্ণাকে অপমান করা। ফেরার পথে কেবল দিলীপকে বোঝাতে চেষ্টা করে নারী পুরুষের সম্পর্ক এমন নয়। অনেক অনেক নরম প্রণয় পর্ব পেরিয়ে তবে শরীর নিয়ে খেলা।
তবুও হিতুর জীবনে প্রেম নিয়ে আসে হিতুর পিসির বাড়িতে ভাড়া থাকা গীতাঞ্জলি। একটা বখা ছেলে নিয়ে পিসির সংসার। গীতাঞ্জলির তখন একটা প্রেমিক দরকার। ওর বন্ধুরা সকলেই প্রেম করে।
বেকার গীতাঞ্জলি হাতের কাছে হিতুকে পেয়ে লটকে গেল। গীতাঞ্জলি যখন হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হল তখনই হিতু বুঝেছিল বেচারীর পড়াশোনার সর্বনাশ ঘটতে চলেছে। সাইন্স পড়ার জন্য একটা পারিবারিক পরিমণ্ডল দরকার হয়। একটা ধারাবাহিকতা। সাধারণ মেধায় ওটা হয় না। গীতাজ্ঞলি পাস কোর্সে বি.এসসি. পাশ করে একটা মন্টেসারী স্কুলে চাকরি নিল আর তারপর ওদের বিয়েও হয়ে গেল।
পিসির ছেলে পিনাকী প্রথমে নিজেদের বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট তৈরী করে প্রমোটারি বিজনেস শুরু করে। ওর তৃতীয় প্রজেক্ট মামাবাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট বানানো। আটটা ফ্ল্যাটের ওর চারটে আর হিতুদের চারটে। নিয়ম অনুসারে বাড়ির মালিক পেল একতলা আর পাঁচতলা। নিচে চারটে গ্যারেজ।
গীতাঞ্জলিকে বিয়ে করে সেজদার সাথে শেয়ারে পাঁচ তলায় একটা আস্ত ঘর পাওয়া গেল। হাফ ছাড়বার জন্য পিসির বাড়িতে ওর মায়ের দু কামরার ফ্ল্যাট তো ছিল-ই।
অল্প স্বল্প ভালোবাসাবাসির সেই বিয়ে একটা পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েই ভেঙে গেল। আসলে গীতাঞ্জলির সাথে আটোসাটো কোন বন্ধন-ই গড়ে ওঠে নি।
ঝগড়া বাঁধল একটা তুচ্ছ কারণে। স্কুল থেকে ফিরে হিতু গীতাঞ্জলির সামনেই ঝট করে উলঙ্গ হয়ে চট করে পাজামা পড়ে নেয়। অনেক সময় জানালার পর্দাও টেনে দেয় না। গীতাঞ্জলির মতে এটা অশ্লীলতা।
তবু এটা নিশ্চয়-ই একমাত্র কারণ নয়। আরো অনেক ছোট ছোট কারণ একত্রিত হয়ে বিচ্ছেদ শেষ পর্যন্ত ঘটে গেল। বছর না ঘুরতেই গীতাঞ্জলি আবার বিয়ে করল হিতুর পিসতুতো ভাই পিনাকীকে। আধার প্রস্তুত-ই ছিল। বখে যাওয়া পিনাকী ততদিনে সফল প্রমোটার। তার ব্যবসার আরো নুতন নুতন দিগন্ত উন্মোচিত। ভারী অদ্ভুত একটা সম্পর্ক তৈরী হল ছেলের সাথে। ছেলে তাকে বাবা বলে ডাকে না আর। পিনাকীকে কাকু বলে কিনা জানে না হিতু। জানতে চায়-ও না। শুধু মাথার ভিতর এক বোধ কাজ করে আর বার বার জানান দেয় —— এই সব নয় , খেলা এখনো ঢের বাকি আছে !!!!
গীতাঞ্জলি চলে যাবার পর সামাজিক অসম্মান ছাড়া আর কোনো ফাঁক তৈরী হয় নি জীবনে। দেখা হয় কদাচিৎ রাস্তা ঘাটে , বাজারে অথবা পোষ্ট অপিসে। গীতাঞ্জলি একঝটকায় মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
স্বাভাবিক —- ভাবে হিতু। ছিলাম স্বামী , হয়েছি ভাশুর। শুধু দিতে হয় সন্তানের রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের খরচ। যদিও হিতু বেশ ভালোভাবেই জানে চ্যাটার্জী বাড়ির ছেলে , জীবনে দাঁড়িয়ে যেতে বেশী দিন লাগবে না।
লেকে যায় রোজ বিকেলে পুরনো বন্ধুদের আড্ডায়। হাসির কথা উঠলে প্রাণ খুলে হাসে। ব্যক্তিগত প্রশ্ন তুলে কেউ বিব্রত করে না। সকলের-ই বয়স হয়েছে।
চোখটা কদিন থেকে ঝামেলা পাকাচ্ছে। হিতু কাঁকুরগাছিতে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে পেয়ে গেল সেন সাহেবকে। অনেক দিনের পুরনো বন্ধু। হায়ার সেকেন্ডারির পর চলে গিয়েছিল বয়েজ নেভিতে। তারপর বন্দুক কাঁধে ব্যাঙ্কের গার্ডের চাকরি নিয়ে নানা হীনমন্যতায় ভুগতো। দেখা হলেই এলেমদার আত্মীয় স্বজনের গল্প শোনাত জোর করে। প্রচুর মদ্যপান আর দেশ-বিদেশের গল্প বলা ওর বিরক্তিকর স্বভাব। বিয়ে না হওয়ার একটা দুঃখ ছিল ওর মনে। কিন্তু এখন পরিপূর্ণ সুখী চেহারা। পোষাকে বেশ ভালো চেকনাই। বলল ——– চল , মা রয়েছেন আমার কাছে। তোমায় দেখলে খুশী হবে। সাজানো ফ্ল্যাট। সুনিপুন গৃহিণীপনার স্পর্শে রহস্যমন্ডিত। মা কোমরের হাড় ভেঙে বিছানায়। কিন্তু ঘরে কোনো দুর্গন্ধ নেই। আশ্চর্য নির্মল আর ধূনোর সৌরভে পরিপূর্ণ বাতাবরণ।
দুজন আয়া। মা ও মেয়ে। চৈতালী আর পিয়ালী। যেন সেন সাহেবের ঘরের লোক। সাজে সজ্জায় দুই বোন মনে হয়। সুগন্ধি চা এল । সাথে মাছের চপ। হিতু বলল —— বেড়ে আছেন মশাই। সেন সাহেব চোখ মটকায় ——- চাই নাকি মা-মেয়ে যাকে খুশী। শুধু দক্ষিণাটা একটু মোটা।
হিতু হাঁ করে থাকে। দেহ সুখ প্রাপ্তি এত সোজা। কয়েকদিন সেন সাহেবের বাড়িতে পালাক্রমে মা ও মেয়ের সাথে যৌনতা বিনিময় জমেছিল খুব। বেশ একটা সংসারী সংসারী ভাব।
শুধু দেহ বিনিময়ের পর লোলস্তনী চৈতালী বক্ষ-আবরণীতে আর শিফন শাড়িতে আধুনিকা সেজে যখন বলত —– টাকাটা !!!!! তখন এক মুহূর্তে সমস্ত সুখ অন্তর্হিত।
শীতের মরসুমে সেন সাহেবের সাথে মা ও মেয়েকে নিয়ে কাটানো গেল তালসারির সমুদ্র সৈকতে। মায়ের খরচের জন্য সেন সাহেব মোটাটাকা পেয়ে থাকেন ভাই-দের কাছ থেকে , এছাড়া রয়েছে নিজের দুটো চাকরির পেনসন। হিতু ভাবে ——— যাহোক এতদিনে লোকটার বিয়ে হয় নি বলে হা-হুতাশ করার স্বভাবটা দূর হয়েছে। শুধু দেহ বিনিময়ের পর চৈতালী যখন বলে —– টাকাটা !!!!! তখন হিতু গুনে গুনে ওর পাছায় তিনটে লাথি মারার ইচ্ছে জোর করে দমন করে।
নানা কারণে বেশ কয়েক দিন সেনের বাড়ি যাওয়া হয় নি হিতুর। চৈতালী ফোন করল —– একদিন আসতে পারবেন একটু। হিতু গিয়ে দেখে স্ট্রোকে ডান দিক পড়ে গেছে সেন সাহেবের। মা-মেয়ের হাতেই চলছে সংসারের চাকা। মায়ের পাশেই আলাদা বিছানায় ঠাঁই হয়েছে সেন সাহেবের।
জীবনের একি করুণ পরিনতি !!!! সত্যিতো আমরা কখনই ভাবি না শেষের সে দিন কত ভয়ংকর !!!! ভাবে হিতু।
একটু কথাবার্তা চালিয়ে উঠে পড়ে হিতু। বাইরের ঘরে এসে চৈতালী জামা কাপড় খুলতে উদ্যত হতেই হিতু বলে —– আজ থাক।
চৈতালী বলে —– একটু অপেক্ষা করবেন কি ? একটু পরেই পিয়ালী আসবে।
পকেট থেকে টাকাটা বার করে চৈতালীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে হিতু। চারিদিকে বাস , অটো , ট্যাক্সি আর মানুষের সম্মিলিত গর্জনের মধ্যে হিতুর মনে হয় ——– এই সব নয় , আরো অনেক দেখা এখনো বাকি আছে।
ছোট বোন বৈশাখীর উৎপাতে বাড়িতে কাক চিল বসার উপায় নেই। ছুটকি পিসির সাথে তার ঝগড়া লেগেই আছে দিনরাত। বৈশাখী বাবা মায়ের কনিষ্ঠ সন্তান। হিতুর মনে হয় এত বজ্জাত মেয়ে মানুষ এই পৃথিবীতে কম-ই জন্মায়। বহু দেখাশোনার পর ওর একটা বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় স্বামী বেচারা পটল তুলে বৈশাখীর খরতপ্ত বাক্য প্রবাহ থেকে নিজেকে মুক্ত করেছে আর বৈশাখী স্বামীর পেনসন আর একটা নিজস্ব ফ্ল্যাটের বলে বলিয়ান হয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে এসেছে।
ছুটকি পিসি ঠাকুরদা ঠাকুমার বৃদ্ধ বয়সের সন্তান। হিতুর মায়ের কাছেই সন্তান স্নেহে লালিত পালিত। বাড়ি ভাগের এগ্রিমেন্টে ছুটকি পিসির নাম নেই। ফলে চিরকাল বাপের বাড়িতে থাকা ছুটকি পিসির এখন হেনস্তার শেষ নেই।
বিয়ের পর হিতু সেজদার সাথে পাঁচ তলায় একটা ঘর পেয়েছিল। বিয়ে করে গীতাঞ্জলি সব ফার্নিচার নিয়ে গেলে সেজ বৌদি মেয়ে কাকলির জন্য সেই ঘর সাজিয়ে নেয়। একতলায় খাবার ঘরে একটা সরু চৌকির ওপর হিতুর বিছানা। এ ঘরের বাতাস একটু ভারী নানা খাবারের মিশ্র গন্ধে আর ফ্রীজের যান্ত্রিক আওয়াজে।
পশ্চিম দিকের ঘরে বড়দা আর বড় বৌদি থাকে ওদের ছোট মেয়েকে নিয়ে আর পূর্বদিকের ঘরে এ বাড়ির মহিলা নিবাস। আগে এই ঘরটার নাম ছিল মায়ের ঘর। এখন মায়ের বিশাল খাটের ভাগিদার কাকিমা , কাকিমার অবিবাহিতা চাকুরে কন্যা , ছুটকি পিসি আর জিহ্বায় খরতর শান দেওয়া বৈশাখী। তার বাক্যবাণে ছুটকি পিসি সবসময় কন্টকিত হয়ে থাকে। বেসিনে পানের পিক ঠিকমত পরিস্কার করতে পারে না। বাথরুমে কমোড নোংরা করে রাখে , ভিজা পায়ে বিছানায় ওঠে —– এমনি হাজার ত্রুটি নিয়ে গোলমাল একসময় থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।
লেকের আড্ডায় প্রশান্ত একদিন বলেছিল এয়ারপোর্টের কাছে এক বৃদ্ধাবাসের কথা। হিতু একা একাই দেখতে চলে গেল। এই কূপমন্ডুক জীবন তার অসহ্য ঠেকছিল।
শরৎ কলোনীর ভিতর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বিশাল ভূখন্ড। মন জুড়ানো সবুজের সমারোহ। বিরাট দিঘি , বাঁধানো ঘাট ,বসার জন্য সাদা মার্বেলের রক ,দিঘির চারপাশ ঘিরে নারকোল , সুপারি গাছের সারি। আরো ভিতরে আম-জাম-কাঁঠাল-সবেদা ইত্যাদি গাছের সমারোহ। মূল ফটক অতিক্রম করে দক্ষিণে লাইব্রেরি আর উত্তরে কৃষ্ণ মন্দির। অনেকটা জায়গা নিয়ে তিনতলা বাড়িতে বৃদ্ধাবাস। আপাতত কুড়িজন আবাসিক। কেয়ার টেকার ছেলেটি ঘুরে ঘুরে সব দেখায়।
ছুটকি পিসি বৃদ্ধাবাসে যাবি ? বৈশাখীর অনুপস্থিতিতে বলে হিতু। কানে খাটো ছুটকি পিসি প্রথমে কথাটা বুঝতেই পারে না। পরে আজন্ম-লালিত আবাস ছেড়ে যেতে হবে শুনে বলে —— ঐখানে গ্যালেও তো এইখানের জন্য মন পুড়বো।
পুড়লে ফিরা আসিস। মানুষ তো বেড়াইতেও যয় কখনো সখনো।
ছুটকি পিসি রাজি হলে হিতু ভাবে দুজনের পেনসনে বেশ চলে যাবে বৃদ্ধাবাসের খরচ। দায় নেই , দায়িত্ব নেই , ঝগড়া , অশান্তি আর থানা পুলিশ থেকে মুক্ত এক জীবন। ইচ্ছে হলে বকবক করো নতুবা স্তব্ধতার অতল গহ্বরে তলিয়ে গিয়ে নিজের মত করে বাঁচো। সময় হলেই খাবার পৌঁছে যাবে তোমার ঘরে। পয়সা দিয়ে সেবার কল কেনার প্রক্রিয়াটি বড় ভালো লাগে হিতুর।
শুধু ভয় কর্ণেল চৌধুরীর মত স্বঘোষিত অভিভাবকদের।
একটু বেশী রাতে হিতুদের দরজায় তিনবার টোকা। কানে খাটো ছুটকি পিসি নিশ্চয়-ই শুনতে পাবে না। কিন্তু হিতু ছিটকিনি খোলার আগেই ছুটকি পিসি ঘর থেকে বরিয়ে আসে , বোধহয় বাথরুম যাবার জন্য। হিতু হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ছুটকি পিসি বলে ——- ভ্যাবলার মত দরজায় দাঁড়াইয়া আছস ক্যান ? কেউ আইব নাকি এত রাইতে ?
হিতু জবাব দিতে পারে না। ছিটকিনি ছেড়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।
খানিকক্ষণ বাদে তিন হাজার টাকার আহ্বান তার জবাকুসুম , বসন্তমালতী আর বুনো ফুলের গন্ধসমেত ঝিঁ ঝিঁ ডাকের মাঝে মিলিয়ে যায়।
হিতু ভাবে সব পুরুষের হৃদয় জুড়ে বাস করে ঝর্ণার মত এক রহস্যময়ী নারী। এর-ই তাড়নায় পুরুষের ছুটে চলা। ঘর ভাঙা আর ঘর গড়ার খেলায় আজীবন চলে অনুসন্ধান। এখন প্রশ্ন হ’ল বিপ্রলব্ধা এই নায়িকা কাল কোন মহাসংগ্রামের জন্ম দেবে !!!!
যদিও জীবনের সূচনা লগ্ন থেকেই হিতু জেনে এসেছে —— এই সব নয় , এর পরেও আরো অনেক ঘটনা ঘটবার জন্য অপেক্ষা করে আছে , না দেখা ভবিষ্যতের গর্ভে।