Email: info@kokshopoth.com
August 18, 2025
Kokshopoth

সৌমাল্য মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ

Mar 13, 2025

সৌমাল্য মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ

কবির নিজের কথায়ঃ

“বাংলা ভাষার এক গদ্য ও কবিতালেখক, এ’ছাড়া সৌমাল্য মুখোপাধ্যায়ের অন্য কোনো পরিচয় আছে কি? বর্ধমান-নিবাসী যদিও, কিন্তু বিশ্বাস, বাস করেন মাটির তলায়। লেখা ও গ্রন্থপাঠ ছাড়া অন্য সবকিছু থেকে মানসিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন বহুদিন। মনে করেন কাম্যুর সংগে রক্তের কিছু গোপন যোগ থেকে গেছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়, সৌমাল্য মুখোপাধ্যায় এক দ্বীপের ভগ্নাংশ, আত্মভুক পোকামাকড়দের সংগে স্বরচিত আন্ডারগ্রাউন্ডে বেঁচে

পাপলিপি

বজ্রবিদ্যুৎপ্রবণ মুহূর্তটিতে কাষ্ঠখণ্ড মুখে নিলে
সারা শরীর তিরিশটি সমুদ্রের মতো ফুলে-ফুলে উঠেছে
সমস্ত পশুপাখিলতা কেঁপে উঠছে অলক্ষ্যে
যেন প্রতিটা কোষের ভিতর ঝড় গুটিয়ে রেখেছিল তার সমূহ শক্তি
আচমকা নিজের প্রবাহ এখন খুলে দিতে চায় নিয়তিবিহীন হাওয়ায়
কারণ
যেকোনো সময়ে
ডিম্বাণুর মধ্যে ফেটে যাবে অসংখ্য অযুত সূর্য
এই তরঙ্গহীন জলের তলায়
কারণ বজ্রবিদ্যুৎপ্রবণ মুহূর্তটিতে তুমি কাষ্ঠখণ্ড মুখে নিয়েছো
অজ্ঞান স্বপ্নে ‘প্রভু, প্রভু!’ বলে ককিয়ে উঠেছিলে
প্রভুও ক্রুরতায় আশ্চর্য পাপউল্কি এঁকে দিয়েছে দেহতরঙ্গে তোমার
পশুপাখিলতা বা যৌন উপায়ে উৎপাদিত ধর্ষক ও নারী নয়
অদূরস্থ ওই তাম্রবেলাতটে সৌধপতনের ধ্বনি শুনে
এখন, এই পৃথিবীতে, কেবল কেন্নো বিষণ্ণ হতে পারে 

গোপন প্রণাম

আয়ুভাণ্ডে মাছ থাকে দেহভাণ্ডে দুধ
বিন্দু মাত্র স্বেদ রাখি বিন্দু মাত্র খুদ
চাল সেদ্ধ হয় রোজ বালবনিতা মরে
অন্নপিণ্ড ভেসে যায় কে ভিক্ষা করে
দেহরত্ন কাঁদে দেখো পঞ্চভূতকায়
ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয় দেহের উপায়
প্রাণচক্র ঘোরে ঐ কালচক্রযান
মৃৎপাত্রে নামিয়ে রেখো গোপন প্রণাম
নিত্য ভয় নির্বিকার মায়ার রুধির
কীভাবে নামাবো এই গুরুব্রহ্মশির
কেঁপে উঠছে কেঁপে উঠছে নাভিখণ্ড এই
মৎস্য মুদ্রা ধ্বংস হয় মায়াভাণ্ডেই গোপন প্রণাম 

শিয়ালের মুখ

“জয় গোস্বামী অবসর নিয়েছেন না নেননি তাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। ‘অর্থহারা একমুষ্টি বালি’, ওটিই ছিল আমার কাছে ওঁর শেষ বই। আর তুমি ‘ভুতুমভগবান’ পড়েছো তো? শেষ পংক্তিটা মনে আছে? ‘মৃত্যুর পরের অংশ আমি লিখতে চাই’, আমিও তাই, ওই, মৃত্যুর পরের অংশ, হ্যাঁ ওটাই লিখতে চাই আমি।”, এটুকু বলতেই সে বললো, “এ কী তোমার বাঁ হাতটা ওরকম কাঁপছে কেন? নার্ভাস্ ট্রেমর্? আর ওই শিয়ালের মুখোশটা পরেছো কেন, আমার ভাইঝির ওরকম একটা আছে, কী ভীষণ বায়না করেছিল মেলায় কেনার জন্য, খোলো, খুলে ফেলো ওটা, প্লাস্টিকের তো, অস্বস্তি হচ্ছে না!”, মুখোশটা খুলে খানিক দূরে ছুঁড়ে দিলাম, দিতেই বাঁ হাতের কাঁপুনিটা বেড়ে গেল, সামনের কাচে নিজেকে দেখলাম, মুখটা কেমন মেয়েলি হাসিতে চুরমার হয়েছে, কী কুৎসিত, ঈষৎ লালাও কী গড়িয়ে পড়ছে না ঠোঁট থেকে! জানু ভেঙে-ভেঙে গিয়ে মুখে ক’রে তুলে আনলাম মুখোশটা, ক্যাফের গাঢ় আলো-অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে শিয়ালের কৌতুহলী মুখশ্রী। আমার তো সাংঘাতিক ভূতের ভয়, হাউমাউ ক’রে মাথাফাথা নাড়িয়ে কেঁদে উঠলাম। কেঁদে ফেলতেই সে বললো, “থাক ওটা আর পরতে হবে না, এখানে কেউ দেখতে পাচ্ছে না, আর ওটা ছাড়াও তোমার মুখটা তো আমার মন্দ লাগছে না, ভয় দূর কী বাত, এমনকি হাসিও পাচ্ছে না বিশ্বাস করো।”, তখনো আমার মুখ থেকে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে কান্না ও লালা।