রাধারাণীর বারোমাস্যা
কৌশিক সেন
রাধারাণীর বারোমাস্যা
বোষ্টমীর ধোয়া কাপড়ে আঁশ লাগিলে মেঘখণ্ড ভাসিয়া যাইতো অনন্ত সমুদ্রে। রসকলি ভিজিয়া উঠিত লালারসে, গোস্ত বিরিয়ানির সুবাসে। মিশকালো তমসা হইতে দেবী ছিন্নমস্তা আসিয়া তুলসীপাতা পাতাইতো ঝিঁঝিঁপোকার সহিত। নাটমন্দিরে পশুবলি চড়িত প্রতি একাদশীতে। ছাগরক্তে ভাসিয়া যাইতো ফাগপূর্ণিমার গৃহস্থালী।
বোষ্টমীর পিত্তদশা উঠিলে মাঝি মাল্লারা আসিয়া ভীড় জমাইতো হরিনাম সংকীর্তনের আখড়ায়। শ্রীখোলে বাজিয়া উঠিত উদাস ভাটিয়ালী। কুলুঙ্গীতে তুলিয়া রাখিত নদীয়ানাগরের পদাবলী। অষ্টপ্রহর ধরিয়া বৈঠা বাহিত মাঝদরিয়ায়। শ্রীখোলে খণ্ডদোষ ঘটিলে মৃগনাভি সঞ্চিত রাখিত হরিলুটের বাতাসায়। সুবাসে ভরিয়া উঠিত রাতের দ্বিতীয় প্রহর।
বসন্ত সমাগমে পর্ণমোচি বৃক্ষের আঘ্রাণে শোক উথলাইয়া পড়িত বোষ্টমীর। শুখা স্তন উপচাইয়া পড়িত মাতৃস্তন্যে। পিঞ্জর খুলিয়া বেবাক উড়াইয়া দিত বাদামী খঞ্জনাদের। আপনিই ভিজিয়া উঠিত শীতল স্তনাংশুক। অকস্মাৎ মৎস্যসম্ভবা হইয়া উঠিত রাধারাণী।
নীলষষ্ঠী
নিঃসন্দেহ। পুষ্প পুষ্প সুখ। আলের তকমায় গঞ্জিকাগান। তাম্রপরাতে সমন্ত্যক যেন! রোদ আর গালিচায়। দস্তার দাগ লেগে আছে মলিন দস্তাবেজে। আলতামিরা তবে!
তবে বাইসন বুঝি! কাঁচামাটি আটচালায় বিষাদপ্রতিমা। নিরাভরণ। স্যাকরা ডেকে একটা চন্দ্রহার গড়িয়ে দিই তবে! আগাম গুনে রাখি কাঞ্চনমূল্য আর বাণীর মুদ্রাগুলি!
ফুল ফুটেছে। ধুতরা। উচ্ছিষ্ট রাত লেগে আছে গর্ভকেশরে। ফুঁ দিয়ে দেখেছি, একটা রেণুও ঝরে পড়েনা নিষিদ্ধ এজলাস থেকে। নিষ্কলঙ্ক। কালোমেঘ ভেসে আসে গাঁজার সুবাসে।
অন্নদামঙ্গল
ভাঙা ঘরে মা আসে রোজ। আলোয় নগররমণীর গান। মালা গাঁথতে গাঁথতে হাজার যৌবন পার করে কেউ কেউ। ঈশ্বর আসেনা তবুও। স্পর্শসুখে নুইয়ে পড়ে বেদেনীর কলাবৃতি।
বরদায়িনী দক্ষিণহস্তে ভাঙাকুলো। ছাই ফেলতে এসেছিল হয়তো! রাবীন্দ্রিক দৃশ্য দেখে ফিরে গেছে বধ্যভূমিতে। জানলা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায়, ভাঙা রাস্তায় হেলতে দুলতে চলে যাচ্ছে ছ্যাকরাগাড়িটা।
নগরবধূদের সময় নেই এখন। শৃঙ্গার সাজাতে ব্যস্ত তারা। পালাবদলের পর উজাড় হয়ে গেছে শয্যাতুলুনির দক্ষিণা, বানের জলে ভেসে গেছে পারাণীর কড়ি। নিবিড় অন্ধকারে এখন চন্দনঘষার শব্দ শুধু।
কচি চালকুমড়োয় ভরে গেছে হেঁসেল। ঝিরিঝিরি কেটে নেন বটিতে। আগুনের আঁচে বসিয়ে দেন কড়াই। গোল হয়ে বসি দাওয়ায়। দেখি, দাউদাউ জ্বলে উঠেছে মায়ের হেঁসেল।