Email: info@kokshopoth.com
July 19, 2025
Kokshopoth

নেপালি কবি মনপ্রসাদ সুব্বার এক গুচ্ছ কবিতাঃ বিলোক শর্মার অনুবাদে

Jul 18, 2025

নেপালি কবি মনপ্রসাদ সুব্বার এক গুচ্ছ কবিতাঃ বিলোক শর্মার অনুবাদে

মনপ্রসাদ সুব্বা: দার্জিলিঙের কবি মনপ্রসাদ সুব্বা ভারতীয় নেপালি সাহিত্যের একজন অগ্রপংক্তির কবি-সাহিত্যিক। কবির ১১ টি কবিতা সংকলন, একটি গল্প সংকলন, একটি লঘু উপন্যাস, একটি রচনা সংকলন ও একটি আলোচনা সংকলন প্রকাশিত রয়েছে। ১৯৯৮ সালে কবিতা সংকলন ‘আদিম বসতি র অন্য কবিতাহরু‘-এর জন্য কবি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান। কবির কবিতা বিভিন্ন ভাষায় (ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, মৈথিলি ইত্যাদি) অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কারে কবি সম্মানিত হয়েছেন।

 

নেপালি কবি মনপ্রসাদ সুব্বার এক গুচ্ছ কবিতাঃ বিলোক শর্মার অনুবাদে

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মাদারিহাট, ডুয়ার্সের বিলোক শর্মা কবি ও অনুবাদক হিসেবে পরিচিত। গত দুই দশকেরও অধিক সময় ধরে সাহিত্যচর্চায়  উৎসর্গীকৃত কবি শর্মা নেপালি ও বাংলা-দু’ভাষাতেই লেখালেখি করেন। কবির নেপালিতে একটি কবিতা সংকলন (‘সময়াভাস’) ও বাংলায় দুইটি বই (‘কবিতার রোটেপিং‘-ভারতীয় নেপালি কবিতার বাংলা অনুবাদ সংকলন ও ‘বাস্তুহারা‘-চর্চিত নেপালি উপন্যাস ‘বসাইঁ’- এর বাংলা অনুবাদ) প্রকাশিত রয়েছে। কবির বিভিন্ন কবিতা হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি ও পাঞ্জাবি ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে।)

 

 

১.

বাথটাবের জল ও ইউরেকা 

                                 

বাথটাবে নেমে

জলের ছোঁয়ায় ভিজে উঠতেই

ঝলকানি উঠে আর্কিমিডিসের চেতনায়

আর বাথটাব থেকে তড়িঘড়ি রাস্তায় বেরিয়ে

জলে জন্মানো সেই উলঙ্গ চেতনা চিৎকার করে ছোটে- ‘ইউরেকা! ইউরেকা!’

 

এখনও

সমস্ত স্নানঘরের বাথটাবগুলোতে

জল আর্কিমিডিসের অবতারের প্রতীক্ষায় থাকে 

যাতে জলের গর্ভে থাকা অন্য ইউরেকাকে নিয়ে 

আরও নগ্ন রোমাঞ্চিত গল্প লেখা যায় 

 

কিন্তু বাথটাবের জল প্রত্যেক দিন 

অবাধে নষ্ট হয়ে যায় 

গর্ভপাতের মতো।

 

কেবল বন্ধ বাথরুমের ভিতরে

জলের নগ্নতার সঙ্গে উলঙ্গ স্নান সেরে কী হবে?

সড়কে ভয়হীন নগ্ন দৌড়ানো চেতনাময় ইউরেকাগুলো কোথায়?

 

 

২.

রক্তমন্দার যখন ফোটে 

                       

 

রক্তমন্দার যখন ফোটে

বিস্ময় জাগিয়ে ফোটে।

 

ফুটে ওঠার স্পর্ধাকে হাতের মুঠোয় শক্ত করে

রক্তমন্দার গাছ বহু মাস ধরে প্রস্তুতি সারে।

একটা কঠিন সংগ্রামের পর

প্রথমে নিজের উপর জয়লাভ করে

নিজের দম্ভকে পরাজিত করে

নিজে জয়ী হবার পর সে

সাংসারিক ভন্ডামী আর লোকাচারের প্রতি জয়ী হয়

দুঃখকে জিতে নেয়, সুখকে জিতে নেয়

আর সংকোচকেও পরাজিত করে

ভিতরে-ভিতরেই উপরে উঠে।

 

তারপর

নিজের পাতাগুলো এক-এক করে ঝরিয়ে 

নিতান্তই নির্বস্ত্র হয়ে পড়ে

নিশ্চল, নির্ভীক, নগ্ন।

 

(এভাবে সবার সম্মুখে 

নগ্ন দাঁড়িয়ে থাকাটা

বোধ হয় সবচেয়ে কঠিন কাজ।)

 

দীর্ঘ নিষ্কাম তপস্যার পর

সিদ্ধার্থের বোধিসত্ত্ব প্রাপ্তির মতো

রক্তমন্দার গাছ সেই নগ্নতা প্রাপ্ত করে

আর সবার অজান্তেই 

নিজের ডালপালার প্রত্যেক শীর্ষবিন্দুতে

ফুটে উঠে সেই নগ্নতার চরম রূপ

এক-একটা হৃদয়ের মতো লাল-লাল ফুল

আহ!!

 

 

 #

উত্তরধ্রুব এখন 

 

অবাধে বেড়ে চলা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে

উত্তরধ্রুব এখন

আইসবার্গের শরীরে বেয়ে

নীচে আটলান্টিকে নেমে এসেছে

যেখানে সে গলা অবধি ডুবে 

সমাধিস্থ হতে চায়!

তবে তার আগে

নিজেতেই মগ্ন টাইটানিক-পৃথিবীকে

এটলান্টিকের তলায় 

বিসর্জন দিতে চায় সে

 

সাবমেরিনের পেরিস্কোপের মতো উঁকি মেরে 

গাঢ় অন্ধকারে আইসবার্গ 

এই উন্মত্ত পৃথিবীর টাইটানিকের জন্য

সেই কবে থেকে ঘাপটি মেরে বসে আছে…

 

                          

 # ৪.

দেশ চেনানোর ক্রমে…                                          

 

ও আমার দেশের মানচিত্র দেখতে চাইল।

আমি একটা পিপলের পাতা দেখিয়ে দিলাম।

ও বিস্মিত হল। আমি বললাম-

“হৃদয়ের মতো নয় কী?”

 

আর ও আমার দেশের

সীমান্তের কথা জানতে চাইল।

আমি দূরে উড়তে থাকা পাখিদের দেখিয়ে দিলাম।

 

আমার দেশের ইতিহাস জানার প্রশ্নে

আমি ওকে

মাটি আর জলের ইতিহাস জিঞ্জেস করলাম।

 

ও আমার দেশের গানও শুনতে চাইল।

আমি শুনতে বললাম- ভোরবেলার মোরগের ডাক

পায়রার কূজন আর বৃষ্টির ঝিমঝিম শব্দ

বাচ্চাদের কান্না/আবার বাচ্চাদেরই হাসির আওয়াজ।

 

যখন ও আমার দেশের

আস্থাকে বুঝতে চাইল

আমি ওকে প্রাচীন প্রেমের গল্প শোনালাম।

 

আমার দেশের ভাষা জানতে চাইলে

উত্তরে আমি

কান্না আর‌ হাসির ভাষা জানতে চাইলাম।