ন’টি কবিতার সিরিজঃ পঞ্চায়েত – অনিরুদ্ধ সুব্রত
ন’টি কবিতার সিরিজঃ পঞ্চায়েত - অনিরুদ্ধ সুব্রত

জন্ম ১৯৭৪ বনগাঁয়। ছাত্র বয়স থেকে কবিতা পড়া ও লেখার প্রতি আগ্রহ। কলেজ জীবনে ১৯৯৪ সালে প্রথম লিটিল ম্যাগাজিন সম্পাদনা শুরু। সঙ্গে নিয়মিত কবিতা লেখা। বাংলা সাহিত্যের অধিকাংশ পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতা, প্রবন্ধ, ফিচার, গল্প ও উপন্যাস এবং বেশ কয়েকটি মঞ্চ সফল নাটক। এ পর্যন্ত প্রকাশিত একক কবিতার বইয়ের সংখ্যা বারো এবং একটি ফিচার সমগ্র ও দুটি উপন্যাস, তিনটি সম্পাদিত গ্রন্থ । বর্তমানে সম্পাদনা করছেন ‘উত্তরপক্ষ সাহিত্য পত্রিকা’। সম্প্রতি ‘পাটাতন’ প্রকাশনা এবং ‘পাটাতন কবিতার ফেসবুক পেজ’ পরিচালনা করছেন। তাঁর উদ্যোগে প্রকাশিত হচ্ছে ‘পাটাতন ভিডিও ম্যাগাজিন’। পেশায় শিক্ষক, নেশা একমাত্র লেখালিখি।
পঞ্চায়েত -১
রঘুর মায়ের দুটি ছাগল, হালে ঘাসে মুখ দেচ্ছে
না। খাসির বাচ্চার গায়ে যদি মাংসই না হলো
তবে, পুষে পড়তা কী ! তাই রেশন দোকান ঘুরে
রঘুর মা ক’প্যাকেট আটা আর এক ব্যাগ মোটা চাল
নিয়ে ফিরছিল। ঢালাই রাস্তার ধারে নৌকো উল্টে
তার পাছায় আলকাতরা মাখাচ্ছিল বেচারাম মালো।
রঘুর মাকে দেখে বেচারাম আলকাতরা রেখে গাঁটের
বিড়ি নিয়ে ধরালো। রঘুর মা দাঁড়াল খানিক, কিন্তু
হেলান দিল গিয়ে পাশের প্রাইমারি স্কুলের দেয়ালে।
নিকটের চল্লিশ পাইপের টিউকলে তখন জল নেবার
ভিড় কমেছে খানিক। সেখান থেকে চেঁচিয়ে উঠল
হারাণ মণ্ডল— দেয়ালে হেলান দিও না রঘুর মা, কাল
রাতে লিখেছে, মুছে যাবে কিন্তু। রঘুর মা পেছনে ঘুরে
দেখল, আব্দুল মোল্লাকে —– চিহ্নে ভোট দিন। ক্লাস সিক্স
পর্যন্ত পড়েছে বলে, রঘুর মা এরই মধ্যে একটা বানানে
ভুল ধরে ফেলল। ততক্ষণে আব্দুলের ছেলে মোবাইলে
ছবি তুলে নিয়েছে— প্রথম কে মুছল দেয়াল। বেচারাম
ফিরিয়ে নিল মুখ । রঘুর মা নস্যি ঘষা দাঁত ফিক করে
থুথু ফেলল। দুটো ক্লাবের-ছেলে এদিকে হেঁটে আসছে
দেখে, রঘুর মা জিজ্ঞাসা করল, —– চিহ্ন টা ফাঁকা রেখেছ
ক্যান্ বাপ ? ছেলে দুটো বলল, ওসব পরে হবে। এখন
বানান ঠিক করতে এলাম, কাল নেশার চোখে
ভুল লিখে ফেলেছে জীবন দা। কথা বাড়াল না রঘুর মা,
ছাগল দুটির খিদের ম্যা ম্যা মনে পড়ল তার..
পঞ্চায়েত – ২
কাঁচা পাটক্ষেত বুক ছাড়ালে দীনবন্ধু ঘোষের
মাথায় সিট হয়। মাটির ট্রাক নিয়ে নদী থেকে
পাকা রাস্তায় উঠতে গিয়ে বলছিল আমিনুল।
যখন ননীর চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে মাটির
ট্রাক গুনে রাখার হিসেবে ভুল করছিল দীনবন্ধু।
ভিজে গামছাটা ছিল তার মাথায়। আমিনুল
স্মরণ করিয়ে বলল, হিসেব ঠিক রাখিস, তা না
হলে দাদা কিন্তু হেব্বি ক্যালাবে। দীনু বিড়ি
ফেলে খৈনি ডলে হাতে। আমিনুল গ্রামের মাটি
নিয়ে শহরে চলে যায়। ননী চায়ের ছিঁবড়ের
বালতি ওপাশের নালায় উপুড় করতে করতে
বলে, দীনু, তুই কি ভুলতি পারিসনে, কত্দিন
আর… । তিড়িং করে লাফিয়ে ওঠে দীনু, মাথার
গামছা ছুড়ে ফেলে দেয়, চিৎকার করতে গিয়ে থামে,
ভীষণ ঘামে। তারপর দীনুর দুই চোখ লাল হয়ে যায়।
ননী টের পায়। ফোটানো চা খানিক
গেলাসে ঢেলে দীনুর সামনে ধরে, নে খা, মাথা
খারাপ করিসনে। দীনু ভ্যা করে ওঠে, ঐ যে
ক্ষেতের পাট বুক ছাড়িয়েছে দ্যাখ্, রাক্ষসের
ক্ষেত, শুয়োরের বাচ্চারা ওখানে…
তাজা রক্ত খেয়েছিল। আজ পর্যন্ত তার
কোনো বিচার হলো বল…
পঞ্চায়েত— ৩
প্রতিদিনই তোমার স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে শ্যামলী,
নাকি এই-ই তোমার নতুন সুস্থতা। মিছিল, মিটিং,
সংগ্রাম, ছাপ্পা। কত ক্ষেত-চেরা পথ ভিজে রক্তে।
জলার ওপাশে ফ্যাকাশে বাঁশবন, তাতে ব্যূহ মৃত্যু।
কৃশ কাশবনে তেমন সাদা ফুল ফোটে না আর।
শুধু কতগুলো অভাবের রঙ কেবল করেছ সোনালী ।
পেরিয়ে আসার ঘাস-আল আর ভাঙা সাঁকো নিয়ে
তুমি কেন ঘুমিয়ে থাকো না প্রিয়তমা, রাজকীয়
গর্ভে দিয়েছে কে তোমাকে ধ্বংসের আমদানি, রপ্তানি।
নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় যাক যত, পাগল হোক
সে গরম ভাতের মাতাল ধোঁয়ার মতো। দূর শহরের
সিনেমায় হাততালি দিতে সকাল হয় যদি হোক, দুঃখ
রাত্রি। নবান্নকে নৈবেদ্য করে হেঁটেছ যে সভ্যতা, তুমি
অনন্তের যাত্রী। তবু তোমার স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে শ্যামলী,
নতুন পাকা ঘর, অলিগলি। বোমা, বন্দুকে ভালবাসো,
মাখো গায় রক্তের হোলি। ছুড়ে ফেলে ভক্তি, পাঁচালী
তোমার দেহের দখলে, ক্ষমতার দূরভিসন্ধি…
পঞ্চায়েত– ৪
ডাইনোসরের শিরদাঁড়ার মতো একটা পিচ-রাস্তা।
তাকে কেন্দ্র করেই কাঠামো। কখনও যাকে মনে হয়
কালো নদী। যার দু’পারে শ্যাওলার মতো জমেছে
গুমটি দোকান। মানুষের কাঁচা-পাকা বসবাস গুলো
জমে আছে যেখানে, কেন্নর ঝাঁকের মতো। মাঠ পেরিয়ে,
ঘন গাছ আর হাঁওড়, নদী। পশ্চিমে, সূর্য নামতেই তার
জাদু খেলার বাজারে জ্বলে ওঠে ইলেকট্রিক। ছেঁড়া ত্রিপল,
বাঁশ-খুঁটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওড়ে উদ্দেশ্য, এলাকা
দখলের বিধেয়। বসে তাবিজ বিক্রির মতো কিছু পথ-সভা। মাধ্যমিকে ফেল করেছিল, অথবা স্কুল গেল আর কবে
সেভাবে—তেমনই সব কাণ্ডারীদের হুঁশিয়ারি বক্তৃতা ।
শুনে, পায়ে পেচ্ছাব করে ফ্যালে— ন্যাংটো খোকা। হয়তো
যে কিনা একদিন সুতো পেঁচিয়ে দেবে বোমায়। একটা
হাত উড়ে গেলে হয়তো হবে ফেমাস হীরো। যদি তার চেয়ে
মেধা উচ্চ মানের হয়, বলে দেবে— নাইন এম এম, কেমন
দেখতে। যেদিন শহরের দিক থেকে সাদা স্করপিও
চড়ে, দিগ্বিজয়ী বীর অথবা প্রতিস্পর্ধী চন্দ্রগুপ্তরা আসে।
গাড়ি থামে নয়নজুলির ধারে । সেদিন এই বনে কস্তুরী-সুগন্ধ
ছড়ায়। চিতাবাঘের গল্পে তো আজকাল ঘুমিয়ে পড়েছে না,
নাকে সিকনি মাখা শিশুরা, হাসছে । অথবা চোখে ছানি পড়া
বুড়োটা কাঁপছে। টিভির সিরিয়াল ছেড়ে, গাঁয়ের টিআরপি
এখন সংবাদে। তবুও কোনো এক পূর্ণিমার রাতে,
দেশি অ্যালকোহলের মতো স্বচ্ছ একটা আকাশ এখানে ।
নেশার মতো বৃষ্টির মেঘ খোঁজে তাতে, প্রত্যেকে…
পঞ্চায়েত- ৫
মাগী মিনসে একসঙ্গে ধানক্ষেতের আলে বসে
ফ্যানভাতে থামায় উদর, রাহু শরীরের শাস্ত্র-পাঠে
একাদশীর কাঁচা রাত, দেরিতে ওঠে চাঁদ, যখন
দড়ি-দেহ চালাঘর-দহে অক্লান্ত বাঁচা-ঘুমে।
ঘন নিবিড় এক ভোট-চাষ, আজন্ম এ নিপাট
ক্ষমতার ইন্ডাস্ট্রি, পাকাঘর, চাল, টাকা, কাজ
এসবই বেড়াঘরে টাঙানো ক্যালেন্ডার, যথারীতি
সুবর্ণসুযোগ, দেবতা সাজার।
ঢাউস বাস এসে দাঁড়ায় বটতলার পাশে, নির্দেশ,
কালে, কালোত্তীর্ণ আদম আর ইভ, ছিটকিনি তুলে,
চেতনায়, ‘দলে দলে যোগ দিন’ বাস ভর্তি করে,
দেবতার জনসমুদ্র চাই— জনসভায়।
সবজির চরাচর, চরে ডাহুক,শালিক, শকুন,কাক
নৌকোর পাটাতনে পড়ে থাকে জাল, পানকৌড়ি
বক,গুমটি দোকান গুম মেরে শুয়ে থাকে ঘুমে,
শুনশান, পঞ্চ-প্রদীপ নিভিয়ে, পঞ্চায়েত চলেছে,
বক্তৃতা অভিযানে।
উচুঁ মাচা, ধাতব মাইক্রোন, ধবধবে উত্তেজনার ঠোঁট,
শক্তির লালায়িত লোভে ভেজা জিহ্বা, নীল
আকাশের নিচে— সবুজ সুড়ঙ্গে পৌঁছে দেওয়ার
হিংসা, মিথ্যা, প্রতিশ্রুতি ভরা মৃত্যু-বন্যায়।
মাগী মিনসে পুনরায় ঘেমে নেয়ে একশেষ, খিদে ঘুমে
আধমরা ফেরে, ফিরে এসে পুনঃ ক্যালানো জীবনে
গোপনে খিস্তি মারে। কাস্তে, কোদালে, কপালে, জানে—
উদাসী ক্ষেতে প্রত্যহ নিরবচ্ছিন্ন ঘাসের বংশ বাড়ে।
পঞ্চায়েত- ৬
ছোটো ছোটো মনসবদারী, কিছু ভাঙা চালা
ছেয়ে নেওয়ার— নজরুল-প্রবাদ গেছে ভেঙে
সম্রাট নিতেন তেজী ঘোড়া, যোদ্ধা, মুদ্রা, শক্তি
আবার অন্যথায়— এই মনসবদারী যেত চলে।
পশ্চিমের সূর্য ঢলে না পড়লে, পুবে কি ওঠে
একই সুবা, পরগনা ভাগ বাটোয়ারা হতে হতে
নাবাল জমিতে উঠে এলো অট্টহাস্যে অট্টালিকা
মেঠো মাটি-ছেনে গরিবি-গল্পে, পঞ্চ-রত্ন প্রভাতে।
সুখ আছে, তাইতো অসুখ আছে, গায়ে গায়ে
ওঠে ঘেঁষে, চির বসে থাকা কপালের মৃত মরদ
একটি চেয়ারের নিমিত্তে চায়—চারজন দাঁড়াতে
তাই, খিদে পেট গিলেছে কত, তা-ই ধ্বনিত বাতাসে।
চাঁদপানা মুখ জাহাঁপনা চেনে, যুদ্ধে বাতিল করে
তেজী ঘোড়া খুঁজে, দেয় গুঁজে, স্টেরয়েড তাহারে
হ্রেষা চরম, চেষ্টা পরম, দেয়াল পতাকা পথই শপথ
কোয়াক ডাক্তার, মৃত বাঁচায়, মেশিনারি সেই জানে।
লেখাপড়া হোক যত্দুর, ছোটো রাজপূত, বিরুদ্ধ
তারও সেই মনসবদারী, এক ও অদ্বিতীয় এক লক্ষ্য
যেহেতু টানাটানি, তাই হানাহানি, হানিকর যেন কিচ্ছু
নয়, ভীতিই রীতি, অস্ত্র, হত্যা, সেই তো প্রকৃত যুদ্ধ।
পঞ্চায়েত- ৭
উড়ে উড়ে বসে স্বপ্ন ফড়িং কচুফুলে, লতায়,
ঘাসে। বৃষ্টি ছুঁচ্ছে শুকনো ডগাটা, রোদ উঠলেই
ঝাঁক আসে। ছোটো সাইজের ছোটো ছোটো হাত,
তালু, রোগা আঙুল। স্বচ্ছ ডানার ফড়িং চঞ্চল—
গোটা রামধনু খেলা আকাশে।
দু’বেলা ভাত পেলে যে জন্ম বাঁচে, যে স্বপ্ন পতঙ্গ
সে— পাখি হলো না যে ; অমেরুদণ্ডী প্রতি চেতনা
টেনিস বলের মতো নাচে। অটো, টোটো, ইঞ্জিনভ্যানে,
ধান-ভানা কলে, গভীর ও অগভীর নলকূপে, তিমির
বিনাশি ঈশ্বরে— ভক্তি নয়, শুধু ভয়ে।
যা দেবে দাও, খোলা হাত, যেটুকু সুবিধা পেশা,
নেশা মিলেমিশে ; তাতেই কীর্ত্তনখোলা জমে গেছে
বৃন্দা, বৃন্দাবনী রাসে।
রীতি, নীতি, স্মৃতি নবকলেবর, ময়নামতির গীতি
সমর্থনী ছাপ তুলে দাও বাক্স ভর্তি আশে। কোন
সাধনার গান শোনাবে, বোমায় মরা কিশোর ছেলের
মাকে । বাইশ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে মদ-মুরগীর হালে,
পঞ্চায়েতের নদী শুকিয়ে ক্ষেত ভেসেছে জলে।
মেলা বসেছে চৌরাস্তায়, চতুর্বর্ণ আর্যে, চিহ্ন ওড়ে
সাকার মুরতি— প্রচণ্ড প্রচার-কার্যে। ধ্বসা দেয়াল
থেকে নেমে, পুড়ছে ঘুঁটে, খিদে ফুটছে যখন আঁচে—
তখনও নরম গোবর-মুখীও নিপাট নিচ্ছিদ্র
ক্ষমতার সুখে হাসে।
পঞ্চায়েত- ৮
বুক চিরে দিতে পেরেছিল রেলের লাইন পিচের
সড়ক, সে কিছু পুরনো কথা। ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে
পারল প্রকৃষ্ট, সে গ্রাম-স্বরাজ, পঞ্চায়েত-রাজ। রোদে
খাটা শরীরে পড়ল রঙ-ছাপ। নাম উপচে দলে, দলা
পাকিয়ে উঠলো দলবলে। নিরীহ রক্তে খেলে গেল স্রোত,
ক্ষমতা, আদিমের উচ্ছ্বাস। দূর শহরের মগডাল থেকে
দেখতে পেল বাজ— যুদ্ধের নিমিত্ত, ছোটো ছোটো ঝাঁক,
সৈন্যদল। দখলের খননে খুঁজে পেল শক্তির কাঞ্চন খনি।
হলো এক নবতর গ্রামীণ শিল্পের নিবিড় বিকাশ—
বোমা, পিস্তলে, হাতের কাজ।
পিতামহের নাম— সর্গীয় ভোটার চন্দ্র রায়। পিতা, শ্রী
ভোটার কৃষ্ণ রায়। সদ্য আহত তরুণ— ভোটার কুমার
রায়। শ্রীমতী মা, কুমারী বোন, পিওর ভোটার হয়ে যায়।
নাম ধাম কাজ কাম— বিস্মৃতপ্রায়। পাড়া ভাগ, পুকুর ঘাট
বাজারও, মায় চায়ের দোকানের বেঞ্চে, পিছন ফিরে
পরস্পর। তাকিয়ে দেখছেন সবই তাহাদের প্রগতীশ্বর।
হাটখোলা, বাঁশতলা, মেঠো পথে, ওড়ে ঘুড়ি
জনসেবার, ছাপানো পোস্টার।
একদা উঠোনে উঠোন মিশে ছিল, তা তো জানো।
ঝড়ে বৃষ্টিতে ফসল তুলে দিত কে না কার ঘরে। একই
দিঘি জলে ধুয়ে মুছে, একের বারান্দায় পড়ত অন্যের
পাত। আশ্চর্য আজ সে সব হাত— বারুদে, রক্তে হয়েছে
অভ্যাস। করে নেওয়া গেছে দখলের কারুকাজ। বুঝিয়ে
দেওয়া গেছে আত্মীয়-হননের সহজ পাঠ। মেলা উৎসবের চণ্ডীতলাকে করা গেছে, কুরুবংসের কুরুক্ষেত্র মাঠ। গোনা
গেছে ব্যালট, বিজয়, গাঁথা গেছে মালিকার ফুল—
রোগা মানুষের গোছা গোছা লাশ।
পঞ্চায়েত- ৯
পাঁচতলা দল, পুরোটাই ঢ্যামনামো। পুরোটাই।
পঞ্চায়েতী বোমার মশলা এখন নিজেই ডুবতে
চাইছে জলে। কবর ও শ্মশানে আজ তুমি
ভুল করে যেওনা। তুমি হে দেব-নেতা শুধু নাও ঘৃণা,
পচনের রক্ত ও ছাই— ওদের প্রেত দেবে ছুঁড়ে।
যে তোমার হয়ে বেঁধে ছিল হিংসা, অথবা যে মরেছে
তাতে। সেই আগুনে— অবাক যে তাঁরা দুজনেই।
কী নীতি, কী ইস্তাহারে অর্ধশত বোকাদের মেরে,
কী ইচ্ছের স্বপ্ন-চিৎকার— ‘নব ভারতবর্ষ’ করে !
পাঁচতলা দল, পুরোটাই ধান্দা। ক্ষমতার তিমি শিকার,
খেও ভাগ ভাগ করে, অতঃপর। যাও কিঞ্চিৎ মার্জনা
চেয়ে এসো— শ্মশানে, কবরে। নিরীহ অমল বিমলের
দেশে, বলে এসো— পাঁচতলা রাজনীতি, পুরোটাই
না-বোঝা বোকাদের নিয়ে। লেলিয়ে লেলিয়ে চরমতম
লাল করে তুলে, তেনারা অবাধ সঙ্গমে চাটে ক্ষমতার
নব রসায়নে। না হয় গিয়েছে পুড়ে কিছু গ্রাম, কিছু
বোকা বোকা সংগ্রাম। আবার সাজিয়ে দেবে পাশা,
দখলের চোষকে এই সব চতুর অক্টোপাসে।