Email: info@kokshopoth.com
June 2, 2025
Kokshopoth দেবব্রত রায়

দেবব্রত রায়ের গল্প

Dec 9, 2024

দেবব্রত রায়ের গল্প

বাড়ি, বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহরে।

কবিতা এবং গল্প দুটোই লিখতে ভালোবাসেন। নিজেকে শূন্য দশকের কবি বলতেই ভালোবাসেন।
সাহিত্যের বিশেষ করে কবিতার বিষয়, পোস্টমডার্নিজম।
যুবমানস, কলেজস্ট্রিট দৈনিক সংবাদ সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা
এবং পোস্টমডার্ন কবিতার অন্যতম মুখপত্র কবিতা পাক্ষিক পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করছেন।

কাক গন্ধ

” আপনি বিশ্বাস করবেন কি-না জানি না, গতকাল সন্ধ্যার সময় ঠিক এই রুম-ফ্রেশনারের গন্ধটাই আমার নাকে ভেসে আসছিল! তারপর মাথার ভিতরে সেই ঘোর-ঘোর ভাবটা জমাট বাঁধতেই দেখলাম, আপনার চেম্বারে আমি এরকমই বসে আছি!” কথাগুলো বলার পর ডাক্তারবাবুকে মৃদু হাসতে দেখে তপোময় বিষণ্ণ গলায় বললো, আমার কথাগুলো আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না স্যার!

ডাক্তারবাবু তপোময়ের কথাটা এড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তা আপনি আমার অ্যাড্রেসটা পেলেন কোত্থেকে?

তপোময় বললো, ওই যে বললাম, স্বপ্নের ভিতরে! আপনার এই চেম্বার, রাস্তা-ঘাট এমনকি, আপনাকেও পর্যন্ত আমি সেই স্বপ্নের ভিতরেই দেখতে পেয়েছিলাম!

ডাক্তারবাবু বললেন, হুম!

“স্যার, এটা কি কোনো মেন্টাল-ডিজিজ!” তপোময় খুবই অসহায়ভাবে ডাক্তারবাবুকে কথাগুলো জিজ্ঞেস করল। ডাক্তারবাবু এবার প্রেসক্রিপশনে খস-খস করে কয়েকটা ওষুধ লিখে দিয়ে বললেন, “দেখুন এখনই অতকিছু ভাবতে যাবেন না। ” তারপর, প্রেসক্রিপশনটা তপোময়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, চারটে ওষুধ লিখে দিলাম। এগুলো নিয়ম করে এক মাস খান। আশাকরি, সব ঠিক হয়ে যাবে! … তারপর বরং সময় করে এসে একবার চেকআপ করিয়ে যাবেন।

ইদানীং, তপোময় তার বিছানায়, ঘরে, এমনকি, আশেপাশে যেখানেই যায়, সেখানেই ও কাকের গন্ধ পায়। যদিও সে কাকের গন্ধ চেনে না কিংবা, কাকেদের আদৌ নিজস্ব কোনো গন্ধ আছে কিনা, তাও তপোময়ের জানা নেই। তবু গন্ধটা কেন যেন কাকের বলেই মনে হয় ওর।

গত সপ্তাহে তপোময়ের বউ রেণুকা পোয়াতি অবস্থাতে, “ভীষণ মন খারাপ লাগছে!” বলে কয়েকদিনের জন্যে বাপের বাড়ি গেছে।  সেই থেকে তপোময়ের যেন আর কিছুই ভালো লাগছে না । বাড়িতে বিধবা বুড়ি মা। রান্নাঘর আর, ঠাকুরঘর ছাড়া তিনি কোনো সাতেপাঁচেই থাকেন না। পরিবেশটা এতই সুনসান যে গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের খচখচ শব্দটাও-পর্যন্ত বাড়িময় শিলনোড়ায় মশলা বাটা আওয়াজের মতোই শোনা যায় ।  দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়ার পর রেণুকাবিহীন বাড়িতে ভীষণই একা-একা লাগছিল তপোময়ের ! অন্য সময় হলে সে ইশকুলেই ব্যস্ত থাকত কিন্তু, এই করোনা-পিরিয়ডে তারও উপায় নেই ! তপোময় রেণুকার আলমারিটা খুলে প্রাণভরে ওর শায়া-শাড়ি, ব্লাউজ, পারফিউমের গন্ধ শুঁকতে লাগল। তপোময় ভাবল, রেণুকার অবর্তমানে ওর একটা শাড়ি বালিশের পাশে নিয়ে শুলে বোধহয় ওর এই একাকীত্ব ভাবটা কেটে যাবে। তপোময় আলমারির থেকে রেণুকার একখানা শাড়ি টেনে বের করতেই, সেটার ভেতর থেকে ভাঁজ করা একটা কাগজ মেঝেতে ছিটকে পড়লো। কাগজটার ভাঁজ খুলতেই তপোময় দেখলো, সেটা আসলে একটা চিঠি ।

ঘরের বাতাসে কাক-গন্ধটা আবারও জমাট বাঁধতে শুরু করলো! রেণুকার কোনো-এক’ দন্ত্য স ‘নামের প্রেমিক তাকে ভালোবাসা ভরা চিঠি লিখে তার পেটের বাচ্চাটার পিতৃত্ব সম্মন্ধে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছে! তপোময় চিঠিটা হাতের মুঠোয় নিয়ে একেবারে চিলেকোঠায় উঠে গেল। সেখানেও গন্ধটা তীব্র! তপোময় চিলেকোঠার দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের অন্ধকার এক কোণে বসে রেণুকাকে লেখা ওর প্রেমিকের চিঠিটা মুঠোর মধ্যে তালগোল পাকাতে পাকাতে খুব ধীরে ধীরে ডেকে উঠলো, কা!