Email: info@kokshopoth.com
June 2, 2025
Kokshopoth

তৈমুর খানের কবিতাগুচ্ছ

Nov 29, 2024

তৈমুর খানের কবিতাগুচ্ছ

নয়ের দশকের কবি ও গদ্যকার। পেশা শিক্ষকতা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কোথায় পা রাখি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : ‘বৃত্তের ভেতরে জল’, ‘জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা’, ‘উন্মাদ বিকেলের জংশন’, ‘সভ্যতা কাঁপে এক বিস্ময়ের জ্বরে’, ‘স্তব্ধতার ভেতর এক নিরুত্তর হাসি’, ‘সর্বনাশের ডায়েরি’ ইত্যাদি। গদ্যের বই ‘কবির ভাঁড়ারের চাবি’ ‘মুক্তির দশক নব্বইয়ের কবি ও কবিতা’, ‘কবিতার বাঁক ও অভিঘাত : এক অন্বেষার পরিক্রমা’, ‘আত্মসংগ্রহ’,’আত্মক্ষরণ’, ‘আত্মস্বর,’ ‘এই কবিতাজীবন’ ইত্যাদি। পুরস্কার পেয়েছেন : কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুনগতি সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি।

সরলতার গল্প

সরলতাগুলি খুঁজতে এসেছি

কোথাও সরলতা আছে?

চারিদিকে রাতজাগা কোলাহল

সঙ্গমের অন্ধকারে ঝরছে শীৎকার

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গল্পের প্রয়াসে

আলো জ্বলে ওঠে

আবার আলো নিভে যায়

কতদিন এই রাস্তায় হেঁটেছিল ব্যঞ্জনাময়ী

কতদিন দুলেছিল বেণী

স্মৃতির আমলকি বন ছুঁয়ে

আমাদের প্রথম কানাকানি

তারপর বৃষ্টি এসেছিল

শ্রাবণের ভরা নদীর কূলে

আমাদের ছাতা উড়ে গেলে

প্রথম ভেজার গন্ধে আনন্দে হেসেছিল জল

তুমিও সরল আর আমিও সরল

সাঁতার জানি না বলে

পৌঁছাতে পারিনি কেউ গল্পের ভেতর

তবু গল্প আছে

সরলতাগুলি এখনও জটিল হয়নি

যদিও অব্যয়-ক্রিয়ায় রাস্তা ভ’রে গেছে!

ভাষাজন্ম

দারুণ পাখিরা সব ডাকছে চারিদিকে

পাখিদের ডাক শুনছি আমিও জেগে জেগে

ক্ষুধা-তৃষ্ণারাও পাখিদের ডাক শুনে শুনে

জৈবধর্ম ভুলে গেছে

জানালা খুলে মাঝেমাঝে চাঁদও চলে আসে

বহু পুরাতন চাঁদ

কাব্য-কবিতার পাড়া ভেদ করে সরস উপন্যাসে

দেহ বিক্রি করেছে সে

জ্যোৎস্নাও দিয়েছ যাকে তাকে

 ইন্দ্রিয়ের তাপ ক্রমশ ঠাণ্ডা হলে

 পাখিদের ডাকেও ভাষার জন্ম হয়

 যে ভাষা বোঝে না কেউ

 শুধু জ্বর হলে কেউ কেউ আচার খায়

 মুখ ভালো হবে বলে

আজ ইন্দ্রিয় পতন হোক

বসন্তে বসন্ত মেলাব—

পাখিতে পাখিতে সংসার ভরে গেলে

আমাদের ভাষাজন্ম তীব্রতর হবে

ভাষায় ভাষায় বয়ে যাবে কালস্রোত….

আমাদের সম্মোহন যায়

রাস্তা যেদিকে গেছে

আমাদের বিস্ময় শুধু সেদিকেই

নীরবতার ভাষা পেয়ে কেবলই অপলক হয়ে গেছে

দৃশ্য পাল্টে যায় বারবার

নতুন দৃশ্যের কাছে আমাদের সম্মোহন যায়

দৃশ্য কি শুধুই দৃশ্য?

ওরও বাঁশি বাজে, মসৃণ উরুর ঢেউ কাঁপে

সমস্ত পোশাক খসে খসে পড়ে

এক শরীরী সভ্যতার কাছে

আমাদের প্রাচীন নদীটিও আবিষ্কার হয়

আমরা শুধু গান শিখে নিই

আর অস্ফুটে গাইতে থাকি তাই

লাবণ্য

কত যে লাবণ্য ঝরে

দেখতে দেখতে লাবণ্য স্পর্শ করি

চারিদিকে ধোঁয়ার বন্দুক

সাম্রাজ্য চালায় রত্নাকর

আমরা চোখের জলে আলপনা এঁকে

রোজ সাজাতে থাকি কল্পনার ঘর

প্রসন্নকুমারের হাতি রাস্তা পেরিয়ে যায়

রাস্তায় আকাঙ্ক্ষাদের লাশ বারবার উজ্জীবন চায়

লাবণ্য কি আমাদের কেউ হয়?

তার পেখমে সুন্দর চাঁদ

জ্যোৎস্না লাগা ঠোটে চুম্বনের নেশা

রুপোলি শরীরে স্বর্গীয় মানচিত্র আঁকা

আমরা ভারবাহী জীব

মৃত্যু বয়ে বয়ে চলে যাই