Email: info@kokshopoth.com
August 18, 2025
Kokshopoth

চেতনায় হানছে আঘাত

Feb 20, 2025

মণিপদ্ম দত্ত

চেতনায় হানছে আঘাত

কয়েকটি অহংকার নিয়ে আধুনিক বাঙালি জাতিসত্তার নির্মাণ। একুশে ফেব্রুয়ারি তার অন্যতম। আর আজকের বাঙালির আন্তর্জাতিক পরিচয়ের সঙ্গে একীভূত হয়ে গেছে একুশের অহংকার। একটি ভাষার ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভাজনের ক্লিন্নতা অস্বীকার ক’রে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ইতিহাস বাঙালীর সর্বোচ্চ  অর্জন। সেই ইতিহাসকে প্রতিনিয়ত যাপন করা নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মতো। হয়তো বা তারও চেয়েও বেশি। যতই সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বা ভাষা-সন্ত্রাস ঘটাক না কেন অশুভ রাজনৈতিক শক্তি, ভাষার দেয়ালে পিঠ দিয়েই লড়বে বাঙালি এটাই সত্যি। জানি অনেকেই হয়তো এই প্রত্যয়কে অতিরঞ্জিত বলে মনে করবেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ইতিহাস কথা বলে; পিঠের দেয়াল ভেঙে পড়লে অন্য কোন উপত্যকা থাকবে না অস্তিত্ব পুনর্বাসনের। ‘পালাবার নেই কোন গোপন দুয়ার’। আর ‘সম্মুখে প্রতীক্ষমান সবুজ প্রান্তরে’ শুধুই শায়িত বল্লমের ক্রুর তীক্ষ্ণতা। যে মারণ তীক্ষ্ণতা অতিক্রম করেছে বাঙালি ইতিহাসের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে। একটি অতি দরিদ্র সদ্যোজাত দেশ কারও ‘চোখ রাঙানিকে’ করেনি গণ্য, ধারেনি ধার। এবং সেই বাঙালি ছিল অন্ত্যজ। সিংহ ভাগ এসেছিল নিম্নবর্গ অবহেলিত সম্প্রদায় থেকে। ব্রাহ্মণ্যবাদের অত্যাচারে ইসলামের আচ্ছাদনে থাকা বাঙালি। বাহান্ন সনে রক্তে ভিজিয়ে দিয়েছিল পাঁচ তাজা তরুণ। শুধুই মাতৃভাষাটুকুকে ভালবেসে। আর সেই শুরু। সেদিনই উপ্ত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ। সে জারণ ক্রিয়া সতত বহমান। মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদের মানস তাকে ধরতে পারবে না। তাই এপার ওপার দুপারেই এক ছদ্মপুরাণ লেখার চেষ্টা চলেছে। ‘বিস্মৃতির মর্মে বসে রক্তে দোলা দেওয়া’-র দায়িত্ব আমাদের সকল ভাষা-শ্রমিকের। ইতিহাসে শ্রমই এনেছে ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলা।  আপামর ভাষা শ্রমিক-ই পারবে এ’ লড়াই জারী রাখতে। এ আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমাদের অহংকার।

 

সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির সকল আক্রমণ ভাষাকে ঘিরেই। ভাষাই আত্মচেতনা। অস্তিত্বের বর্ম। সংস্কৃতি শিল্পকলার মর্মস্থল। সেটা ভাঙতে পারলেই অনন্ত সম্ভাবনার বাজার। আর আজকের বাজারবাদ তো সব কিছুই খায় ও খাচ্ছে। ভাষার লড়াইও তাই তীব্রতর হওয়া প্রয়োজন।

 

এই পরিস্থিতিতে ভাষার আন্দোলনকে আর বিচ্ছিন্ন একক শিরোনামে ধরা যাবে না। সমগ্র অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়েরই অনিবার্য অঙ্গ। আজকের বাংলা ভাষা সবচেয়ে আক্রান্ত তথাকথিত বাংলা প্রেমীদের দ্বারাই। কী এদেশে। কী অপর বাংলায়। এক তো এডুকেশন আর স্কিল দুটোর পার্থক্য গুলিয়ে গেছে। যেমন গুলিয়ে গেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য। বলা ভাল গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সাড়া বিশ্ব জুড়েই। গোলকায়ন দিয়ে যে চক্রান্তের শুরুয়াত। অলীক স্বপ্নের ঘোরে সাড়া পৃথিবীর মধ্যবিত্তই ভুলে গেছে ইংরেজি কাজের ভাষা, চেতনার ভাষা নয়। বাঙ্গালিও কোন ব্যাতিক্রম নয়।  ঢেউয়ে ঢেউয়ে দোলা লোভের ছলনার কাছে নিরন্তর আত্মসমর্পণের কলঙ্ক হয়ে উঠেছে গৌরব তিলক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজেই সার্বিক ভাষা সন্ত্রাস সৃষ্টির দ্বায়িত্ব নিয়েছে। অপাং ঝপাং আর অপাংক্তেয় নয়। বরং লেখক   সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। এটা যে ঘোর অসম্মান সেটুকু বোঝার ক্ষমতাও লুপ্ত। পশ্চিমবঙ্গ আজ ভাষা মাফিয়াদের কব্জায়। আর বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে কবে আবার পাকিস্তানের অংশীভূত হবে। ইতিহাসের কী নিদারুণ বিদ্রূপ। তবে মানুষই চিরকাল শেষ কথা বলে। তাই ভরসা হারাই না।  

 

ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, লড়তে হবে একসাথে। কক্ষপথ লড়াইয়ে বিশ্বাস করে।