Email: info@kokshopoth.com
July 19, 2025
Kokshopoth

চন্দ্রাণী গোস্বামীর কবিতা

Jul 4, 2025

চন্দ্রাণী গোস্বামীর কবিতা

চন্দ্রাণী  গোস্বামীর জন্ম সত্তর দশকের শেষদিকে। স্কুলজীবন, বড়ো হয়ে ওঠা সবই কলকাতায়। পড়াশোনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। কলকাতার একটি কলেজে হিসাব রক্ষণ বিভাগে কর্মরতা। 

ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি তীব্র আসক্তি। নতুন দশকের শেষ থেকে নিয়মিত লেখালেখি। কবিতা আশ্রম, কৃত্তিবাস, গাঙ্গেয়, অপদার্থের আদ্যক্ষর, এই সহস্রধারা, বম্বে ডাক, তমোহা, সাজি পত্রিকা, বিকল্প বার্তা সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত। 

 

‘ নিমফুলের মেয়ে ‘ প্রথম এবং ‘ব্যথা ঋতুর পালকেরা’ কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ।

# ১

গালিব, আপনি

(০১)

এই গালিবের শহরে, তৃষ্ণাতুর অবস্থায় 

একদিন শেষবারের মতো চাঁদ উঠেছিল… দেখে বুক চাপড়ে কেঁদেছিল কবি।

 

জাহান্নামের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কবিতা মুহূর্তের জন্য শাদা হয়ে গিয়েছিল।

 

(০২)

বেলা এগারোটায় সমুদ্র থেকে সুরার নেশা আসছে। মহামতি গালিব, মিথ্যা কেন বলছেন আমায়?

 

সুরার নেশায় আপনার আয়নায় কোন শূন্যতা ভেসে ওঠে, যদিও আমার জানা নেই—–

আমার নীরবতা আর আপনার স্তব্ধতায় রক্তপাতের অনিবার্য সাদৃশ্য দেখতে পাই।

# ২

ধুলোবালি

বেআক্কেলে শীতের বিকেল ডেকে বলে যায়

মিহিন বৃষ্টি আর সাদাফুল মুঠোর ভিতর বুনে দিয়ে

যে ফিরে গেছে, তার হাতে দিও তোমার প্রত্ন-নাভি

উপচে ওঠা যাবতীয় কুহক মায়াকাল।

 

এরপর প্রশ্রয় নিও ধাবমান স্রোতের। 

 

গ্রামীণ শ্মশানের পাশে যে মাঝিটি বসে থাকে

তাকে দিও গর্ভকালীন শোক, সন্তরন। ধ্যানস্থ 

হবার আগে তার কাছে চেয়ে নিও শেষবিন্দু জল। 

 

সে চেনে শেষ গন্তব্য নৌকার। অন্তিমে চেনাবে আলো।

দহন শেষে দেবে জল। দেবে চির নির্বাপণ।

 

# ৩

প্রলাপ 

প্রয়োজনে পাখি নয়

যেমন লোহুর ভেতর কান্না ঢুকে থাকে অজ্ঞাতবাসে

তেমন বুকের হাপরে রাখো তার উগরানো বিষ

 

যে কথা বাক হলে, আকস্মিক ছিনতাইয়ের মতো

ডেকে নেবে স্বপ্নের ওপারে, মেহেদি সবুজের 

গাঢ় সোহাগ ঢেলে দেবে নরম পালকে পালকে, 

 

তীক্ষ্ণ ঠোঁটে নামিয়ে আনবে ঘাতকের ফলা 

শিরায়-শিরদাঁড়ায়, হেরে যাবে উদগ্রীব ভালোবাসাগুলি 

তার নখরের আকাঙ্ক্ষার কাছে…

 

সেইসব হলুদের দিনে

তাকে খুলে দিও গভীর শিকড়খানি, তার মোহের 

উপবাস ভেঙে যথাযথ ডালপালাগুলি মেলে রেখো 

নির্ভুল সূর্যের দিকে…

 

মাটির কাছাকাছি বসে তার হাতে তুলে দিও 

পাখি, রমণীয়, রমণী এবং ভালোবাসা …

 

                    একযোগে ভীষণ নীরবে।

 

# ৪

সিঁড়ি 

অট্টালিকার ভেতর কতো রকম সিঁড়ি

ওঠার নামার, নামতে নামতে থামার

প্রতিরাতে এতো ওঠা নামা—

প্রিয়তম, 

তোমার চোখে আর চাঁদ উঠবে ক্যামনে!

 

একদিন ছাদে উঠো সাবধানে

পিছল সিঁড়ি ধাপে 

বহুদিনের জমে থাকা জল, আমি তো পারিনি

পা পিছলিয়ে চিরকালের অধঃপতন—

 

তুমি বেয়ে উঠে যেও 

দেখো মাপা মেঘেও বৃষ্টিরা কতো মূল্যবান,

 

তারপর আকাশ মুছিয়ে দেয় মেঘ 

ছাদে মহাকাশের নক্ষত্ররা নেমে আসে, পৃথিবী 

আবার পুরোনো হয় মহাকালের মতো  …

 

# ৫

মসীকৃষ্ণ

 

আরতির শাঁখে অবেলার ঘুম টুটে যায়

 

উলুধ্বনিতে গড়িয়ে যায় ক্ষতভরা মেঘ, আফসোস ;

 

বহুদিন দেবতা দর্শন হয়নি

তবুও কে যেন রোজ আমার কানে একাক্ষরী মন্ত্র বলে

ধীর স্পষ্ট উচ্চারণে…

 

কেউ নেই পাশে…

তবে কেন নিঃশর্ত দাসখত লিখি!

নিগূঢ় আঁধারে দেখি এক কৃষ্ণকায় মুখ, মোহনবেনু…

 

মসীকৃষ্ণ

        জপতে জপতে

                আমিও মসৃণ কেঁদে ভাসাচ্ছি তুলসী-চন্দন যাপন  অনবদ্য মীরার মতো।