Email: info@kokshopoth.com
October 13, 2025
Kokshopoth

কৌশিক সেনের তিনটি কবিতা

Feb 7, 2025

কৌশিক সেনের তিনটি কবিতা

প্রায় একুশ বছর দিল্লিপ্রবাসী, জন্ম ও বেড়ে ওঠা বহরমপুর শহরে। কর্মসূত্রে কেন্দ্রীয় সরকারী আধিকারিক হলেও ধর্মসূত্রে ও মর্মসূত্রে পরিচয় কবি, একান্তভাবেই।

উত্তর চল্লিশের কবি তাই কবিতাকেই জীবনদর্শন হিসেবে বিশ্বাস করেন।

অ্যালিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড

সাঁইত্রিশতলার ওপর থেকে ঝাঁপ দিতে গিয়ে মেয়েটি দেখেছিল একখানি নদী। বিভাজিকায় ভাগ হয়ে যাওয়া পেলব উপত্যকা। কান্নারা কীভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাচ্ছে নদীর প্রবাহে। দেখেছিল, প্রশ্নবোধক চিহ্নের মত অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের গায়ে কেমন ভিড় করছে অন্ধ কুয়াশারা।

সাঁইত্রিশতলার ওপর থেকে পড়তে পড়তে মেয়েটি দেখেছিল একঝাঁক বালিহাঁস। পালকে পালকে লিখে রাখা মান্ধাতার মহাকাব্য। বিচ্ছুরিত আলোয় কবেকার প্রশস্তিবাক্য যেন! ডানার ঝাপটায় ফেটে ফেটে যাচ্ছে মৌসুমীবায়ুর বুদ্বুদগুলি। ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিচ্ছে অলৌকিক দিকনির্দেশ।

সাঁইত্রিশতলা থেকে পড়তে পড়তে মেয়েটি দেখতে পেয়েছিল আস্ত একটি গ্রাম। হাটে হাটে পসরা, ঘাটে ঘাটে কলসের উচ্ছলতা। দীপ জ্বলে আছে প্রাচীর ঈশ্বরীর নাটমন্দিরে। মন্ত্রোচ্চারণে বাঙ্ময় হয়ে উঠছে আকাশ বাতাস। শীতের প্রস্তুতির গল্প করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে গোধূলির পসারিণীরা।

সাঁইত্রিশতলা থেকে পড়তে পড়তে মেয়েটি দেখেছিল মানুষের ভিড়। নিঃশব্দ। কেউ কারও সাথে কথা বলছেনা। আবার বলছেও। দূরতম ব্যক্তিটির সাথে। কানে কানে। ইয়ারপডে। ভরে উঠছে চ্যাটবক্স। মুখে হাসি, চোখের কোণে জল। ভিড়ে পাশের মানুষটিকে ছুঁয়ে দিলে অদৃশ্য হয়ে যায় কেউ কেউ।

আর নীচে আছড়ে পড়া হয়নি বছর উনিশের মেয়েটির। একটি রামধনু প্যারাসুট এসে তাকে তুলে নিয়ে গেছে উপরে। অনেক অনেক উপরে। মেয়েটির ফ্রকের ফ্রিলে অন্ধ টুনিবাল্বগুলিতে জ্বলে উঠেছিল ধবধবে জ্যোৎস্নারা।।

মান্তুদি বুড়ি হয়ে গেলে….

মান্তুদি বুড়ি হয়ে গেলে আর দিদি বলে ডাকবোনা, শুধু মান্তু বলে ডাকবো। স্বচ্ছ আকাশে কাচ বসাবো এক, নদীর গ্লাস পেইন্টিংয়ে ভরে দেবো আলো, জলে জলে ঘুঙুরশব্দ। রঙিন মাছে ভর করবে বালিকা ঈশ্বরী। মান্তুদির চটি, পায়ের নখ নদীর জলে ভিজে গেলে সন্ধ্যামালতির চুটকি পরিয়ে দেবো আঙুলে। পাখির পালক এঁকে দেবো মান্তুদির বাইফোকালে।

মান্তুদির হাঁটুতে বাতের ব্যথা বাড়লে ঘন কুয়াশা বিছিয়ে দেবো পূর্ণিমায়, অমাবস্যায়। একাদশীতে লিখে রাখবো ফলিত সমুদ্রবিজ্ঞান। দ্বাদশীর চাঁদ থেকে মুছে রাখবো গোপন অসভ্যতাগুলি। যদি লাঠিতে ভর দিয়ে পার হতে চায় বালুচর, নীরবে গিয়ে হাত ধরবো, কাকজ্যোৎস্নার অন্তরালে।

যদি সব চুল পেকে যায় মান্তুদির, সূর্যের রশ্মি ঢেলে দেবো ওর হেয়ার ডায়ারের বোতলে। যদি ধরা পড়ে যাই, বলে, বেরিয়ে যা এক্ষুনি, দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে, পাখি হয়ে উড়ে যাবো, তক্ষুণি! বসবো গিয়ে মান্তুদির মরে যাওয়া কাকাতুয়ার দাঁড়ে। খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে মান্তুদি।

তিনদিন না দেখতে পেয়ে পড়শীরা দরজা ভেঙে যেদিন বের করে আনবে মান্তুদির নশ্বরতা, জানি, সেদিন হয়তো মনে পড়বে আমাকে। মনে মনে খুঁজে বেড়াবে, পাড়ার তেমাথা থেকে শ্মশানতলা অবধি। আমি তখন শিকি, রেজকির গায়ে লেগে থাকা ধুলো, হরিলুটের বাতাসা চেটে খাওয়া বিষপিঁপড়ে, কিম্বা উড়োখই, হয়তো বা!

বায়েপসি রিপোর্ট

এসো, তরঙ্গের কথা বলি। গোধূলির প্রায়ান্ধকার শরীরে ম্যালিগন্যান্ট হয়ে উঠুক রহু চণ্ডালের লিপিগুচ্ছ। প্রশ্ন ও সম্ভাব্য উত্তরের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাতে হাতে বুনে নিই ভ্রমরবিলাস। যা কিছু মোহান্ধ, সান্ধ্র, সন্ধের কাকলির মত গৃহী, সবটাই তুলে রাখি স্নানঘরের কুলুঙ্গিতে। এসো, স্নান সারি অলীক শাওয়ারে।

কোষে কোষে স্থিরতা নেই আর। আহা মেঘ, বড় কার্সিনোজেনিক! সন্ধের ঘোরে ঘোরে অদ্বৈত পিপাসা আজ! কৃষ্ণা দ্বাদশীর চন্দ্রকলায় কর্কটরাশির কুহক। এসো, ঘ্রাণ নিই পূরবের। স্থির থাকতে থাকতে ঝরে গেছে ফুল। স্থানাঙ্কের ভ্রমে ঝরে গেছে গালিবের রূপসীরা। এসো, রতি কুড়াই এই অঙ্গারে।

ফাঁকিতে ভরে গেছে নগরের রূপকথাগুলি। শুধু ধোঁয়া আর উত্তাপ। যেন অশ্ব ছুটে চলেছে ধূসর গান্ধারে। ডেইলি কেমোর উল্লাসে দুয়েকটি পাখি উড়ে গেলেও আশ্চর্য হবেনা এখন। এসো, অবেলার সাভানায়। আসুরিক ভালোবাসায় দুয়েকটি দেবতা গড়ে তুলি অনন্ত গোধূলিতে।