Email: info@kokshopoth.com
August 17, 2025
Kokshopoth

আনন্দজিৎ গোস্বামীর নিবন্ধ

Dec 13, 2024

আনন্দজিৎ গোস্বামীর নিবন্ধ

পেশায় অধ্যাপক-গবেষক। বিষয় অর্থনীতি, বিশেষত টেকসই উন্নয়নের অর্থনীতি (sustainable economic development) । দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি।

মূলত ইংরাজিতে লেখেন। বহু পুরস্কারে ভূষিত। উল্লেখযোগ্য বই-লুসি য় সেই ট্রেনটি, Siddharth, A Green Day। এছাড়াও সঙ্গীত পারদর্শিতার জন্য বহুল প্রশংসিত।

কনসিলিয়েন্স (Consilience) মূল চেতনার একটি জরুরী বিতর্ক

আজকের টালমাটাল পৃথিবীর বুকে দাড়িয়ে , প্রশ্ন উঠতে পারে যে “Rationality, Reason” আর “Religion” কি একে অপরের শত্রু। অর্থাৎ, ধর্ম বা “রিলিজিয়ন” কি “Rationality, Reason” কে প্রশ্ন করার জন্য তৈরী হয়েছে। আবার “রেশনালিটি” র কাজ কি ধর্ম কে প্রশ্ন করা। এই জায়গা তেই, পনেরশ শতাব্দী তে কবির এর গান বা লেখা পড়লে বোঝা যায় যে “রেশনালিটি, রিজন” হচ্ছে “ধর্মের” আধার। সেই আধার থেকেই”রেশনালিটি, রিজন” পূর্ববর্তী ধর্মের “hegemony” কে প্রশ্ন করে যা”Christianity” এর দ্বারা এক বিশ্বব্যাপী রুপ নিয়েছিল এক সময়। কবির আর লালনের গান, বাউল গান rationality,

reason কে ধর্মের আধার বানায় আর ধর্মের hegemony কে প্রশ্ন করে। লালনের “সব লোকে কয় লালন যারে” গানটি শুনলে সেটা আরো বোঝা যায়।  আমার মতে “Consilient” চিন্তা ভাবনার মৌলিক জন্ম হয় ভারতীয় ভাবধারায় এই কবির আর লালনের গানে। এই মৌলিক ভাবধারা “Rationality,

Reason” এর মাধ্যমে এক “রিলিজিয়ন” এর জন্ম দেয় “কজ” হিসেবে। যার “ইফেক্ট” দেখা যায় যখন সেই “রিলিজিয়ন” ধর্মের “Hegemony” কে মেটাতে সাহায্য করে এই “রিলিজিয়ন” এর মাধ্যমে। এই কজ আর ইফেক্ট “Consilient” চিন্তা ভাবনার মধ্যেও দেখা যায় পরবর্তী কালে। এই প্রবন্ধ টি তে সেই “কনসিলিয়েন্স” চিন্তা ভাবনার দিকে পাঠক কে ছেড়ে দেওয়াটাই আমার মূল লক্ষ্য। সেই চেষ্টাই করা হয়েছে এডওয়ার্ড ও উইলসন এর “Consilience” বইটি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে।

এডওয়ার্ড ও উইলসন কনসিলিয়েন্স শব্দটি এবং তার নব্বই এর দশকে ছাপা “কন্সিলিয়েন্স” বইয়ের মাধ্যমে এক অচেনা জগতে নিয়ে চলে যান সমস্ত পাঠককে ঠিক যেরকম পনেরশ, আঠারসো, উনিশশো শতাব্দীতে কবির আর লালন করেছিলেন পাঠকদের সাথে। এডওয়ার্ড ও উইলসন এর বইয়ের মধ্যে দিয়ে নব্বইয়ের দশকে সমস্ত পাঠক মৌলিক “কন্সিলিয়েন্স” এর স্তর থেকে ঢুকে পড়ে এক আন্তর্জাতিক স্তরে। এই প্রবন্ধ টি সেই স্তর গুলোকেই ছোঁয়ার চেষ্টা করছে।

নব্বইয়ের দশকে লেখক এডওয়ার্ড ও উইলসন পাঠককে এক কক্ষপথে পৌঁছে দিলেন যেখানে সমাজ বিজ্ঞান, প্রকৃতি বিজ্ঞান, ধর্ম, নীতি এক অমোঘ সুতোয় ধরা দিল। সত্যি কি এরকম হয় যে সমস্ত সামাজিক, ঐতিহাসিক ঘটনাকে প্রকৃতি বিজ্ঞান এর আধারে “কজ” আর “ইফেক্ট” এর মাধ্যমে ধরা যায়? তাহলে সমস্ত কিছুকেই ভৌত বিজ্ঞান এর সংজ্ঞা ধরে বোঝার চেষ্টাই কি “কন্সিলিয়েন্স”!

এই কন্সিলিয়েন্স কে সম্বল করেই কি আমরা তবে বুঝতে পারব কেন যুদ্ধ হয়, কেন কোন ধর্মের প্রচার হয়, কেন মানুষ ধর্মান্ধ হয় বা কেন কোন ধর্মের পতন হওয়ার পর আরেকটা ধর্মের জন্ম হয়। প্রকৃতির কজ আর ইফেক্ট অনুযায়ী কি জীবন মৃত্যুর মত যুদ্ধ, ধর্ম, হিংসা, বাদ বিবাদ বেড়ে ওঠে, বড় হয় আর তারপর তার মৃত্যু হয়।

সমাজ বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের দর্শনে প্রকৃতি বিজ্ঞান এর মাধ্যমে সমাজ কে এই ভাবে দেখতে অসুবিধা হতে পারে। কারণ আমাদের কোন কিছুর দেখার দর্শনে দুধরনের চোখ তৈরী হতে পারে। একটি চোখ যা আমাদের “এমপিরিকাল এথিক্স” দিয়ে জীবন কে দেখতে বলে। অন্য চোখটি আমাদের “Transcendental এথিক্স” দিয়ে জীবনের ঘটনাকে দেখতে বলে। ইমানুয়েল কান্ত বলেছেন যে এথিক্স প্রাকৃতিক কজ আর ইফেক্ট এর বাইরে গিয়ে পরিশীলিত হয় মানব অন্তরে। সেই অন্তরে মানুষ নিজের বোধ, ধর্ম, জ্ঞান, এথিক্স এর নির্মাণ করে যা কজ আর ইফেক্ট এর বাইরে বাস করে। প্রতিটি মানুষ তার নিজের মতো করে, নিজের জীবন রাজনীতি দিয়ে গড়ে তোলে “এমপিরিকাল এথিক্স”। সেই এমপিরিকাল এথিক্স এর দুনিয়াতে কান্ত এর হাত ধরে কোন মানুষ ন্যাচারাল এথিক্স কে অতিক্রম করে হয়ে উঠতে পারে ধর্ম বিরোধী, ধর্ম ভীরু, ফ্যাসিস্ট, হিটলার, পুতিন, জেলেনস্কি, বা অন্য কেউ। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এর কজ আর ইফেক্ট আর জীবন, মৃত্যুর স্বাভাবিক যাত্রা অনেক সময়তেই এই ভাবে এথিক্স কে ধরতে পারে না। এখানেই কনসিলিয়েন্স এর সাথেই একটা দ্বন্দ শুরু হয়।

এই দ্বন্দ মানব সভ্যতার সাথেই বেড়ে উঠেছে। তাই দেখা যায় যে আমেরিকাতে ও আজ ১৫ লাখ ব্যাপটিস্ট সদস্য আছে যারা বাইবেল ও তাঁর বিভিন্ন প্রকার বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করছে। সেই আমেরিকাতেই আমেরিকান হিউম্যান এসোসিয়েশন সংস্থাতে শুধু মাত্র ৫ হাজার মানুষ সদস্য কাজ করছেন। এই সংস্থাটি কন্সিলিয়েন্স এর প্রতি নিবেদিত এবং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াতে মানব জীবনের পরিক্রমাকে দেখার চেষ্টা করে চলেছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই সংস্থাটিতে এত কম সদস্য কেন যখন সেই দেশেই ১৫ লাখ সদস্য বাইবেল চর্চা করছে। তার মানে কি ধর্মের শক্তি এতটাই প্রকট যে তার সামনে বিজ্ঞান ও কন্সিলিয়েন্স এর প্রকোপ কম হয়ে যায়। যেখানে বিজ্ঞান ও কন্সিলিয়েন্স এর শেষ, সেখান থেকেই কি ধর্মের শুরু?

ইতিহাস দেখায় যে, রাষ্ট্র, স্টেট এর সাথেই ধর্মের প্রসারণের যাত্রা শুরু। কখন সেটি হয়েছে চার্চ এর হাত ধরে বা কখন colonialism,

imperialism এর হাতে খড়ি নিয়ে। ধর্ম এক একটি সংস্থান এর সৃষ্টি পথ ধরে জন্ম দিয়েছে হিংসার এবং তারা তারপর হয়ে উঠেছে একটা গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের। সেখান থেকেই এসেছে সাম্প্রদায়িকতা ,

cult আর মিথ এর হাত ধরে। ধর্ম সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠার আগে মানুষের মধ্যে থেকে জাগতিক হয়েছে cult আর মিথ এক একটি মানুষ ঘিরে যিনি কিনা হয়ে উঠেছেন ধর্মের ধারক ও বাহক। মানুষরা এই cult আর মিথ কে মেনে নিয়েছে তাদের ধারক হিসেবে। এইখানে কনসিলিয়েন্স এর দূরবীন দিয়ে দেখলে চোখে পরে যে মানুষ cult বা myth কে মেনে নিয়েছে একটা বায়োনিউরোলজিকাল কারণে। প্রত্যেক মানুষের মানা না মানার পেছনে কাজ করে তার বায়োনিউরোলজিকাল চেতনা। সেখান থেকেই জন্ম হয় মানুষটি কাকে বিশ্বাস করবে, কি করবে। তাই কেন কোন মানুষ cult বা myth হবে তাঁর পেছনে পরোক্ষে রয়েছে বায়োনিউরোলজি।

সেই cult সত্তা থেকে বেরিয়ে যখন ধর্মকে সবার বা সর্ব বিরাজমান করা হয় তখন যে সেটা করে, বা বলে তাকে পোহাতে হয় কষ্ট, ঝক্কি। তাই স্পিনোজাকেও পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল তাঁর প্রাণের দায়ে। নাহলে চার্চ নিয়ে নিতো তার প্রাণ।

এই রক্ত লীলা আজ চলেছে এবং চলবে। ভবিষ্যতে তাই লড়াই হবে কিভাবে consilience এর মাধ্যমে ধর্মকে সেক্যুলার, Humanise করা যায় Transcendental আর Empirical এথিক্স এর মাধ্যমে। আজকে দাঁড়িয়ে তাই কনজারভেশন এথিক্স এর সময় পড়েছে আজকের “Erezomoic Era” বা “Age of Loneliness” এর সময়তে। কোনো একটা সময় আসতে চলেছে যখন

“Genetics” বলবে যে ভবিষ্যতে ধর্ম কোন দিকে যাবে। এক ধর্মের প্রচারক কি “জেনেটিক্স” এর মাধ্যমে বেছে নেবে তাঁদের মতন ভবিষ্যতের সম্প্রদায়কে। প্রত্যেকটি ধর্মের মানুষ আজ একই সাথে নিজ ধর্মের প্রচারক আবার একাকী ও একই সাথে। কারণ এটাই একাকীত্বের সময় “Erezomic Era” তে বেঁচে থাকার নিয়ম। সেই একাকীত্ব কাটাবার জন্য এক এক ধর্মের সম্প্রদায় বেছে নিতে পারে তাঁদের চেতনা বহন কারী মানব সমাজ কে এক নতুন জেনেটিক বিপ্লবের মাধ্যমে। সেই ভবিষ্যত কি আদৌ “Ethical Conservation” এর দিকে আমাদের নিয়ে যাবে। নাকি আর বাড়াবে হানাহানি, যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতা। এর সঠিক কোনো উত্তর অব্শ্যই নেই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু ভয়াবহ এক ভবিষ্যত আসতেই পারে। সেই ভয়াবহতা কে কাটাবার জন্যই আর বেশি করে দরকার “Consilience” সত্তার আমাদের চিন্তন প্রক্রিয়াতে। সেই সত্তার মূল নির্ধারণ হওয়া উচিত “Ethical Conservationism” দিয়ে। সেই conservationism এর মধ্যে দিয়ে অবশ্যই আমাদের সাত্রের “absolute individual existentialism” এর উপরে উঠে দাড়াতে হবে। ভাবতে হবে কি করে ওর উপরে উঠে আমরা একটি “Collective” সত্তার দিকে এগিয়ে যেতে Bhabte hobe পারি এই “Erezmoic Era” তে। জেনেটিক বিবর্তন অবশ্যই ঘটবে। মানুষের কাছে “genetic engineering” এর প্রযুক্তি খুব শীঘ্রই চলে আসবে। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ বেছে নেবে একই সত্তায় বিশ্বাসী পরবর্তী প্রজন্ম। “Erezmoic Era” এই প্রক্রিয়ার জন্ম দেবে। E হবে এক অদ্ভুত জেনেটিক সিলেকশন যা বদলাবে darwin er natural selection কে। কিন্তু এই পৃথিবী যদি সবচেয়ে সুন্দর নীল গোলাকার ধরিত্রী হয় মানুষের কাছে এবং মানুষ যদি না ভাবে যে সে অন্য কোন একই রকম ধরিত্রী তে খুব শিগগিরই বাস করতে পারবে, তাহলে নিজের বাঁচার তাগিদেই “collective consciousness” এর কাছে মানুষকে পৌঁছতে হবে। সেই পৌঁছনোর রাস্তায় consilience কে সাথে নিয়ে মানুষকে চলতে হবে সাত্রের ‘ individual existentialism” এর উর্দ্ধে উঠে। তবেই সময়, পৃথিবী, মানব সভ্যতা বিনা রক্তপাতে এগিয়ে চলতে পারবে। এর নির্ভুল উত্তর আজকে দাঁড়িয়ে একদমই নেই। হয়তো সময়ের ওপর আমাদের এই সবকিছু কে ছেড়ে দিতে হবে।

হয়তো কোনো একদিন একমাত্র সময় বলতে পারবে এডওয়ার্ড ও উইলসন তাঁর বই “কনসিলিয়েন্স” এ কতটা সময়কে ধরতে পেরেছেন বা পারবেন মানব সভ্যতার ইতিহাসের পাতায়। ঠিক সেই সময় এবং মুহূর্ত অবধি অপেক্ষা করে থাকাটাই আমাদের পক্ষে শ্রেয় হবে।

তথ্যসূত্র

পোজম্যান এলপি। যৌক্তিকতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস। ধর্মীয় স্টাডিজ। 1979; 15(2):159-172. ডিওআই:10.1017/S0034412500011288

বিশ্বাস ও যৌক্তিকতার বাইরে, 2020, খণ্ড 34, আইএসবিএন: 978-3-030-43534-9

ধর্মীয় জীবনে যুক্তি, যৌক্তিকতা এবং জ্ঞানের গুরুত্ব: আবদুল আল-সামাদ পালিম্বানির একটি সমালোচনামূলক অধ্যয়ন।

অন বিয়িং ইন্ডিয়ান: দ্য অর্গানিক ইন্টেলেকচুয়াল, মিস্টিকাল পোয়েট্রি অ্যান্ড লিনিয়েজ অব … – অমিত চৌধুরী – গুগল বুকস