Email: info@kokshopoth.com
August 18, 2025
Kokshopoth দেবব্রত রায়

আমি যুধিষ্ঠির

Mar 4, 2025

দেবব্রত রায়-এর গল্প

বাড়ি, বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহরে।

কবিতা এবং গল্প দুটোই লিখতে ভালোবাসেন। নিজেকে শূন্য দশকের কবি বলতেই ভালোবাসেন।
সাহিত্যের বিশেষ করে কবিতার বিষয়, পোস্টমডার্নিজম।
যুবমানস, কলেজস্ট্রিট দৈনিক সংবাদ সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা
এবং পোস্টমডার্ন কবিতার অন্যতম মুখপত্র কবিতা পাক্ষিক পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করছেন।

আমি যুধিষ্ঠির 

এখন বাচ্চাদের পার্কে ঢোকার জন্য কুড়ি টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়। ভেলকিওয়ালা রতন তাই আর পার্কে ঢোকে না। কুড়িটা টাকা দিন-দশেক বাঁচাতে পারলেই ওর ছোট ছেলেটার হাপরোগের ওষুধ কেনা যায়। এদিকে একটার পর একটা সমস্যা যেন রতনকে কচু-ঝোপের মশার মতো একেবারে পিনপিন করে ছেঁকে ধরছে। অকাল-বৃষ্টির জন্য ক-দিন ওর সেরকম রোজগারপাতি হয়নি। আর তারমধ্যেই কাল হাজরার মোড়ে বাস থেকে নামতে গিয়ে গাড়ির চাকার তলায় পড়ে ওর সাধের ডুগডুগিটা ভেঙে একেবারেই চানাচুর হয়ে গেছে।

একটা ডুগডুগি না-হলে খেলা দেখানো যায় না। আজকাল খদ্দের জোটানোর জন্য শুধু বাঁশি ফুঁকলে কাজ হয় না, সঙ্গে ডুগডুগিও বাজাতে হয়। এদিকে পকেটের অবস্থাও ভাঁড়ে-মা ভাবানী। তাই অনেক ভেবেচিন্তে, হিসেবনিকেশ করে রতন কালীঘাটের ব্রিজে ওঠার মুখটার সামনে এসে হাজির হলো। এখানটায় গলিঘুঁজির ভেতরে কয়েকটা বাজনার দোকান আছে, যেগুলোতে সস্তায় সেকেন্ডহ্যান্ড মাল পাওয়া যায়। রতন ধীর পায়ে হেঁটে গলির ভিতরের সেরকমই একটা ঘুপসিপারা দোকানে গিয়ে ঢুকল। দোকানদারটা একেবারেই ছোকরা টাইপের। রতন পকেটের অবস্থা বুঝে দর-দামের একেবারে মা-মাসি করে, ছোকরাটাকে কথার ম্যাজিকে পটিয়ে শেষমেশ একটা ডুগডুগি কিনেই ফেলল । খুব-একটা পছন্দ না-হলেও এত কম দামে এরচেয়ে ভালো ডুগডুগি-যে পাওয়া যায় না, সেটা রতন ভালোমতোই জানে।

ছোকরা দোকানিটা বলল , মালটা নতুন বটে। তোমাকে দিয়েই বউনি করলুম ।

অভ্যাসমতো দু-একবার নেড়ে ঝাঁকুনি দিয়ে ডুগডুগিটা বাজাতেই, রতন আর দোকানি দুজনেই একেবারে থ-মেরে গেল। রতন আড়চোখে তাকিয়ে দেখল, ছোকরা- দোকানিটাও ডুগডুগিটার দিকে ভুতে পাওয়া-রুগীর মতো বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে। রতন আবারও ডুগডুগিটা ধীরে ধীরে দু-চারবার নাড়িয়ে তারপর হটাৎ-ই, কব্জিতে একটা জোর মোচড় দিয়ে একেবারে নিজস্ব স্টাইলে আরেকবার সেটা বাজাল। আর সঙ্গে সঙ্গে আবারও, ডুগডুগিটার ভেতর থেকে যেন কেউ আগের মতোই চিল্লিয়ে বলে উঠল, আমি যুধিষ্ঠির! আমি যুধিষ্ঠির! 

রতন তাড়াতাড়ি ডুগডুগিটা দোকানের মেঝেতে নামিয়ে রেখে খানিকটা ভ্যাবাচেকা খাওয়া-গলায় বলল, এমন ভুতুড়ে বাজনা তো জীবনে দেখিনাই গো দোকানি ! 

দোকানদার-ছোকরাও-যে বেশ ঘাবড়ে গেছে সেটা রতন তার হাবভাব দেখেই বুঝতে পারল। ছোকরাটা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ডুগডুগির ঝাঁকার থেকে আরেকটা ডুগডুগি নামিয়ে এনে বেশ জোরে-জোরে দু-চারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেটা বাজাল। কিন্তু সেই ডুগডুগিটার থেকে আর আগেরটার মতন ওরকম অদ্ভুতুড়ে- আওয়াজ বের হল না। বরং সাধারণ ডুগডুগির মতোই সেটা ডুগডুগ করে বেজে উঠল। ছোকরা দোকানদারটা এবার রতনের দিকে বেশ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল, এটা তোমার ভেলকির কারসাজি নয় তো !  

রতন কথাটা শোনামাত্রই, নিজের কান মলে, জিভ কেটে একেবারে অপ্রস্তুতের একশেষ হয়ে উঠলো। বলল, গুরুর দিব্যি, মাইরি বলছি !  অমন পাপ কাজে গুরুর বারণ আছে গো দোকানি ! গুরু-বিদ্যের ব্যভার যেখানেসেখানে করতে নাই ! 

ছেলেটা তবুও রতনের দিকে কিছুক্ষণ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থেকে নিমাই নামের কাকে যেন ফোনে ধরলো। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করল , কালকে যে ডুগডুগিগুলো সাপ্লাই দিয়েছ, সেগুলো কোথাকার মাল? 

ওপাশের নিমাই লোকটা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করল, কেন বল দেখি? 

দোকানি-ছোকরাটা বললো, একটা ডুগডুগির ভিতর থেকে কিরকম অদ্ভুতুড়ে সাউন্ড বেরুচ্ছে !  

নিমাই নামের লোকটা আবারও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সামান্য নীচু গলায় বললো, ওহ, তাহলে বোধহয় সেই ঢপের ডুগডুগিটা তোর কাছে চলে গ্যাছে-রে। শোন, পাঁচ কান করিস না।ওটা আসলে একটা ঘুষখোর নেতা, ইয়ে মানে, মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি । আর তাই বোধহয়, আওয়াজটা একটু অন্যরকম বেরোচ্ছে । প্রথম-প্রথম একটু ট্যানট্যান করবে। তবে বিক্রি না হলে মালটা ফেরত দিয়ে দিস।

আধো অন্ধকারে ঝুপসি দোকানটার ভিতরে  তখনও রতন আর ছোকরা দোকানদার সেই অদ্ভুতুড়ে ডুগডুগিটা নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। ওরা জানে ট্যানট্যান নয়, ডুগডুগিটা বাজালেই ,  এক্ষুণি ওটার ভেতর থেকে আবারও আমি যুধিষ্ঠির! আমি যুধিষ্ঠির…আওয়াজ বেরিয়ে আসবে।