Email: info@kokshopoth.com
August 18, 2025
Kokshopoth

আঘাত

Mar 26, 2025

তৃষ্ণা বসাক-এর গল্প

তৃষ্ণা বসাক আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি অতিপরিচিত প্রিয় নাম। জন্ম কলকাতা । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ই. ও এম.টেক.। সরকারি মুদ্রণসংস্থায় প্রশাসনিক পদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শী অধ্যাপনা, সাহিত্য অকাদেমিতে অভিধান প্রকল্পের দায়িত্ব – বিচিত্র ও বিস্তৃত কর্মজীবন। বর্তমানে পূর্ণ সময়ের লেখক ও সম্পাদক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রবন্ধ মিলিয়ে গ্রন্থ ১২-র বেশি। সাহিত্য অকাদেমির ভ্রমণ অনুদান, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার সহ পেয়েছেন অন্যান্য বহু পুরস্কার। হিন্দি, মালয়ালম, ওড়িয়া

আঘাত

দীপিকা বলেছিল ‘ও, মানে তৃণা একদিন আপনাকে এমন আঘাত দেবে যে আপনি ভাবতেও পারবেন না। বাইরে থেকে দেখতে ওরকম মিস্টি, যেন ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানে না, রোজ দেখবেন মিস্টি মিস্টি গুড মর্নিং, গুড নাইট পাঠাবে, কিন্তু একদিন এমন ঘা দেবে, আর শুকোবে না। কী বলব মল্লিকাদি, নিজে জ্বলছি বলেই আপনাকে সাবধান করে দিলাম। কী যে ভালবেসেছিলাম ওকে। ওর জীবনের অর্ধেকটাই আমার গড়ে দেওয়া। আর ওর কাছ থেকেই…’ সেই থেকে মল্লিকার মনে একটা ভয় কাজ করে। কী সেই আঘাত এই ছোটখাট মিস্টি চেহারার মেয়েটা দিতে পারে, মল্লিকা বুঝতেই পারেন না। তৃণা এলে তিনি ভালো করে দেখেন ওকে। ওর চেহারার মধ্যে এমন কিছু তিনি খুঁজতে চান, যেটা খুব ভয়ংকর, নৃশংস এবং অপ্রত্যাশিত। তিনি আন্দাজ করতে চেষ্টা করেন ও কোনদিক থেকে তাঁকে কষ্ট দিতে পারে। তাঁর তো ধারণা তাঁকে আর কেউ কষ্ট দিতে পারবে না,  পৃথিবীর জলে রোদে একা হাঁটতে হাঁটতে এতটাই মজবুত হয়ে গেছেন তিনি। যারা ছেড়ে যাবার সবাই ছেড়ে গেছে, নতুন যে কোন লোককেই তিনি যথেষ্ট মেপে নেন।  একা থাকেন, একা থাকার সহজাত গুণ যে সতর্কতা, তা তাঁর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণেই আছে।  কারও ভালবাসার, সাহায্যের প্রত্যাশা করেন না।  দোকান বাজার, ব্যাংক, ইলেক্ট্রিক সব কাজকর্ম অনলাইনে। তাঁর কাজের এলাকাও তৃণার থেকে একদম আলাদা। তাহলে কোনদিক থেকে আঘাত করতে পারে তৃণা, তাঁকে?
 
প্রতিদিন মল্লিকা  ভাবেন আজ বোধহয় সেই দিন। তৃণাকে দেখলে  আজকাল তাঁর হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, কান মাথা ঝাঁঝাঁ করে, গলা শুকিয়ে যায়। সেই, সেই অনুভূতি যা প্রেমে পড়লেই হয়। তৃণাকে দেখে একদিন তিনি বলতে শুরু করলেন ‘তোমাকে এত  সুন্দর দেখাচ্ছে কেন?’ কেন তুমি এত সুন্দর হবে? কেন?’ তাঁর ইচ্ছে এসব শুনে শুনে রেগে যাক তৃণা। সে তাঁকে ঘৃণা করবে, তারপর আসবে চরম আঘাত। যার জন্য এতদিন অপেক্ষা করছেন তিনি।
কিন্তু তৃণা তাঁর ভালো খারাপ সব ব্যবহারেই একরকম প্রতিক্রিয়া দেয়। এক রকম মধুর। অসহ্য রকমের মধুর।
মল্লিকা একদিন প্রস্তাব দেন ‘তৃণা আমার সঙ্গে একদিন গড়িয়াহাট যাবে?’ তিনি জানেন   তৃনা অবশ্যই বলবে যাব না। অবধারিত বলবে। মুখের ওপর বলে বসবে তাঁর সঙ্গে বেরোতে বোরিং লাগে ওর। শপিং তো আজকাল অনলাইনেই করেন, কয়েকদিন শখ হয়েছে সেই অনেক বছর আগের মতো  ঘুরে ঘুরে কেনার। তখন অবশ্য কেনা কম, দেখাই বেশি ছিল। কলেজ জীবন, তারপর সদ্য চাকরি। টাকার টানাটানি। তখন এক একটা জিনিসের ওপর তাক করে থেকে থেকে অনেক মাস পরে কিনতে পারতেন। এমন হয়েছে যে একটা চান্দেরি শাড়ি কেনার টাকা জমতে জমতে বছর ঘুরে গেছে। তখন ঐ শাড়িটা বিক্রি হয়ে গেছে, কিংবা পেছনে সরে গেছে, সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কী এক মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি থাকে, তাঁর বোধের অগম্য, সেখানে পছন্দের জিনিসগুলো সরিয়ে দেওয়া হয় অনেক সময়, তুলনামূলক সস্তা ও মন কাড়া শাড়ি, সেগুলো সরিয়ে ক্রেতাদের মনে উৎকণ্ঠা তৈরি করা হয়, উৎকণ্ঠা আর শূন্যতা, উৎকণ্ঠা তাদের বাধ্য করে আরও দামি শাড়ি কিনে ফেলতে স্রেফ সেই শূন্যতা ভরাতে, আর পছন্দ করে রাখা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে থাকা সেই শাড়িটির জন্যে তারা আরও বেশি বেশি দোকানে আসে, অন্য শাড়ির স্তূপের মধ্যে পাগলের মতো খুঁজে চলে সেই কাঙ্ক্ষিত শাড়িটিকে, না পেয়ে তারা চরম হতাশায় অন্য শাড়ি কেনে।
সন্দেহ নেই এই দোকানের বিপণন নীতি যাঁরা বানিয়েছেন, তাঁরা প্রেমের বিষয়েও বেশ অভিজ্ঞ। প্রথম ভালবাসার পুরুষ বা নারীকে না পেলে এখনকার ছেলেমেয়েরা কেউই আর দেবদাস হয় না। তারা তখন যথেচ্ছ বিহার করে, চারিত্রিক শুদ্ধতা জিনিসটি প্রথম প্রেমের মতোই ঝরে যায়, এরপর যা থাকে তা হচ্ছে জীবনের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সন্ধান। একটি প্রেমের শোক ভুলতে হাজার প্রেমে তাকেই হয়তো খুঁজে চলা।
ঠিক এই ঝোঁকটাকেই মূলধন  করেন দোকানীরা। তাঁরা প্রথমেই একটি শাড়ির শোক তৈরি করেন। তারপর সামনে এগিয়ে দেন সর্বশোক ভুলানিয়া সুরার মতো নেশা ধরানো রাশি রাশি শাড়ি- বাফতা ভাগলপুরি, পচমপ্ললী বেগমপেট, গিচা, কোসা – আরও নাম লিখতে গেলে মাথা ঝিমঝিম করে।
তো সেই নেশাগ্রস্ত কিনিয়ে থেকে তিনি আজ কিঞ্চিত শান্ত সমাহিত অবস্থায় পৌঁছেছেন। এখন তিনি লোভে পড়ে কম কেনেন, বেশি কেনেন অধিকারের আনন্দের জন্যে, প্লেজার অব পজেশন। তৃণাও কি তাঁর প্লেজার অব পজেশন? তাঁর ঠিক অর্ধেক বয়সী মেয়েটি, ক্রপড টপ আর র‍্যাগড জিন্স পরে তাঁর নরম লিনেনের পাশে পাশে হাঁটছে, তাঁর সঙ্গে কফি খাচ্ছে, নিজের ল্যাপটপ বার করে  কিছু একটা দেখাচ্ছে তাঁকে, আর ওর চুল থেকে লেবু ফুলের গন্ধ পাচ্ছেন তিনি, তৃণা চলে গেলে এসব কিছু তাঁর জীবনে থাকবে না- এই না থাকাটাকেই কি তিনি ভয় করেন?
নাহ তৃণা এল তাঁর সঙ্গে গড়িয়াহাটে। শাড়ি পছন্দ করল, কফি খেল, ওর জন্যে শাড়ি কিনতে চাইলে না বলবে জানতেন, কিন্তু না বলল না। এমনকি মল্লিকা ওর জন্যে যে শাড়িটা পছন্দ করলেন, সমুদ্র নীল একটা মাহেশ্বরী, সেটাই নিল ও। মল্লিকা ওর দিকে ক্রূর চোখে তাকান-
‘আমি তো জানতাম তোমার সি গ্রিন পছন্দ নয়, তুমি অন্য কিছু নিতে পারো। এমনকি মাহেশ্বরী না নিয়ে অন্য কোন শাড়ি, আর এই ভাগলপুরিটা দেখো, কী  গ্রেস্ফুল, অফ হোয়াইট আর ব্ল্যাকে এই গিচাটাও অপূর্ব’
তিনি ইচ্ছে করেই এমন সব শাড়ি দেখাচ্ছিলেন, দোকানে গিয়ে ‘বয়স্ক  বিধবাদের শাড়ি দেখান তো’ বললে দোকানীরা যেগুলো দেখিয়ে থাকে। এতেও কি রেগে যাবে না তৃণা? রাগাই উচিত ওর।  ২৮ বছরের একটা মেয়েকে যদি এইসব শাড়ির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়…
কিন্তু না, তৃণা তো রাগলই না, বরং খুব মন দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল সব কটা শাড়ি, তারপর সমুদ্র নীল শাড়িটা নিজের গায়ে ফেলে দেখল আয়নায়। মল্লিকা ওর পেছনে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ওকে। চুল মুড়িয়ে কাটা সেকালের বিধবাদের মতো, কান থেকে কাঁধে লুটোচ্ছে একটা কংকাল, এটা নাকি দুল! হা ঈশ্বর!  গলায় নানা রঙের বিডসের লম্বা মালা, হাতে এক গোছা চুড়ি, কনুই অব্দি প্রায়, এইরকম কারো সঙ্গে কারো না ম্যাচ করা গয়না আর কালো রঙের ক্রপড টপের ওপর এই অসাধারণ  শাড়িটা কীভাবে ক্যারি করবে ও, সেটা দেখতে, এবং দেখে মজা পেতেই মল্লিকা এসে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু দেখে থমকে গেলেন তিনি। ওইরকম একটা উদ্ভট সাজ পোশাকের ওপর শাড়িটা  একটা ফিউশন স্টেটমেন্ট তৈরি করেছে। রাজেন্দ্রাণীর মতো দেখাচ্ছে তৃণাকে। যৌবন আহা যৌবন, তার সঙ্গে তৃণার একটা অদ্ভুত নির্ভার ব্যক্তিত্ব।
দোকানের মহিলাটি   আয়নায় তৃণাকে দেখে হেসে বলে ‘ কী সুন্দর লাগছে আপনার মেয়েকে! দেখুন তো এখনকার মেয়েরা শাড়ি পরে না, পরলে কী অপূর্ব দেখায়। চুলগুলো এমন মুড়িয়ে না কাটলে হত না বোন? স্টেপ কাটেও আপনার মেয়েকে দারুণ লাগত’
বারবার ‘আপনার মেয়ে আপনার মেয়ে’ শুনে রাগের থেকেও বেশি উৎকণ্ঠা  হয় মল্লিকার। বুক দুরদুর করে। এই না তৃণা চেঁচিয়ে উঠে বলে ‘ দূর উনি আমার মা হবেন কোন দুঃখে? উনি আমার জাস্ট পরিচিত একজন’
কিংবা বাইরে বেরিয়ে  এসে হিসহিস করে বলবে’ এই জন্যেই আমি আপনার সঙ্গে কোথাও বেরতে চাই না। উই লুক লাইক মাদার ডটার। আই হেট ইট’ আর এর থেকে বড় আঘাত কী হতে পারে? তৃণা সেসব না করে মল্লিকার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল ‘আমাকে কেমন দেখাচ্ছে মল্লিকাদি? নিই তাহলে এই শাড়িটা? প্যাক করে দিন প্লিজ’
বুক থেকে একটা ভার নেবে যাবে মল্লিকার। দীপিকা মেয়েটা কি বাজে! হিংসুটে একটা। তাঁর সঙ্গে তৃণার এত ভালো সম্পর্ক দেখে হিংসেয় জ্বলছে। ও কেবল চাইছে তৃণার বিরুদ্ধে তাঁর মন বিষিয়ে দিতে। অথচ কী মিস্টি মেয়ে তৃণা। কত বুদ্ধিমতীও। কী সুন্দর ভাবে সে সামলাল পরিস্থিতিটা। সে তাঁকে আঘাত দিতে পারে কোনভাবে? কক্ষনও না।
 

তবু ভয় করে। যখনি দীপিকার কথা মনে পড়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে যান মল্লিকা। যেন ঘরের মধ্যেই ওত পেতে আছে আততায়ী, কিন্তু কোন দিকে আছে বুঝতে পারেন না, সবসময় মনে হয় এই বুঝি কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ল। পুজো চলে যায়। হেমন্তের বেলা ছোট হয়ে আসে। ব্যালকনিতে দাঁড়ালে মনখারাপের মতো ঝরা পাতা গোত্তা মেরে পড়ে। তাঁর মনে হয় অনেকদিন তৃণা আসেনি, ফোন করে মাঝেমাঝে, মেসেজ পাঠায়, কিন্তু আগের মতো নিয়মিত কি? ও কি সমুদ্র নীল মাহেশ্বরী শাড়িটা নিয়ে খুব রেগে আছে? এইবার, এইবার ওর দেওয়া আঘাত তাঁর ওপর নেমে আসবে। এ থেকে কোন পরিত্রাণ নেই।
তিনি ফোন করেন তৃণাকে। এখন ও ক্লাস রুমে হয়তো, পড়াচ্ছে। কিংবা কলেজ ক্যাম্পাস ধরে হেঁটে গেস্ট হাউসে খেতে যাচ্ছে। ওর একজন স্টেডি বয়ফ্রেন্ড আছে, সেও তরুণ অধ্যাপক। ওরা লিভ ইন করে না, তবে মাঝে মাঝেই দু তিনদিন বেরিয়ে পড়ে ছুটি পেলেই। হয়তো এখন সেই বন্ধুর সঙ্গেই বসে আছে ও। খুব আরাম হল ভেবে, তাঁর ফোন পেয়ে কত রেগে যাবে ও।
তৃণা ফোন ধরে বলে ‘কী হয়েছে মল্লিকাদি? শরীর ভাল তো?’
‘ফোন করেছি বলে খোঁজ নিচ্ছ? এখুনি একবার আসতে পারবে? আর আমি যে শাড়িটা দিয়েছি পুজোতে ওটা পরে এসো’
তৃণা নিশ্চয় রাগে ফেটে পড়বে, বলবে ‘বাহাত্তুরে বুড়ি কোথাকার? আমার কলেজ ফেলে আমি আপনার কাছে যাব, তাও আবার সেই শাড়িটা পরে। সো ইন্সেন্সিটিভ’
সেদিকে না গিয়ে তৃণা হেসে হেসে বলে ‘একটু পরেই আসছি মল্লিকাদি, বাড়ি ফিরে শাড়িটা পরেই। আপনার হাতের দার্জিলিং চা খাব’
তিনি কটকট করে বলেন ‘রাতে এখানে খেয়ে যেও’


এত দেরি করছে তৃণা! তার মানে ওঁর আমন্ত্রণের কোন গুরুত্বই ওর কাছে নেই। বিকেলে চা খেয়ে শান্তি পেলেন না। বারবার ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন, রাতের জন্যে অর্ডার দেওয়া চিলি  ফিশ আর মিকডস ফ্রায়েড রাইস চলে এল, তবু তৃণার আসার নাম নেই। আরেকবার ফোন করতে যাচ্ছেন, তখুনি কলিং বেল বেজে উঠল। তৃণা, সেই শাড়িটা পরে এসেছে, খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে, কিন্তু বেশ ক্লান্ত।
‘আমি এক্সট্রিমলি সরি মল্লিকাদি, আসার সময় মার শরীরটা বেশ খারাপ হল, বাবা না ফেরা অব্দি বেরোতে পারলাম না।
মা, বাবা! এরাই বড় হল তাঁর চেয়ে। সেদিনও দিল্লিতে একটা প্রজেক্ট পাঠাবার জন্যে তাঁর রেফারেন্স নিয়েছে। তিনি গম্ভীর মুখে বলেন ‘ইটজ ওকে। খুব দেরি হয়ে গেছে। একেবারে ডিনার দিয়ে দি’ বলে রান্নাঘরে এসে ওর প্লেটে খাবার বেড়ে তাতে প্রচুর নুন আর লংকার গুঁড়ো মেশান, তারপর দুজনের প্লেট নিয়ে বসেন টেবিলে। হেসে বলেন, ‘খিদে পেয়েছে নিশ্চয়,  আগে খেয়ে নাও। পরে নাহয় চা করে দেব।‘
এইবার, এইবার, নুন আর লংকার জ্বালায় তৃণার ভেতরের অন্ধকার প্রাণিটা বেরিয়ে আসবে। আর তিনি এই টেনশন নিতে পারছেন না। আজকেই দেখা যাবে কত আঘাত ও দিতে পারে। উৎকন্ঠায় তিনি আদৌ খেতে পারেন না, খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করেন শুধু। উল্টোদিকে বসে কী করে ও অবলীলায় খেয়ে যাচ্ছে এত নুনে পোড়া, ঝাল এই খাবার? রাগে ব্রহ্মাণ্ড জ্বলে ওঠে মল্লিকার। আজ তাঁকে দেখতেই হবে তৃণার ফর্সা সুন্দর মুখের নিচের কুৎসিত নিষ্ঠুর আসল মেয়েটাকে। তিনি টেবিলে সুন্দর করে সাজানো ফর্ক স্পুনের সেট থেকে একটা ফর্ক তুলে ওর গালে বসিয়ে দেন, রাগে জ্বলতে জ্বলতে বলেন ‘এবার এবার, কুৎসিত গালি দিবি তো? তখনি ধরা যাবে তোর লেভেলটা। দীপিকা বলেছিল বারবার, আমি শুনিনি’
তৃণা একগালে কাঁটা চামচ গাঁথা অবস্থায় খেয়ে চলে, খেয়েই চলে!