Email: info@kokshopoth.com
October 13, 2025
Kokshopoth

গুচ্ছ কবিতা- সব্যসাচী রায়

Sep 12, 2025

গুচ্ছ কবিতা- সব্যসাচী রায়

সব্যসাচী রায় একজন একাডেমিক লেখক, কবি, শিল্পী এবং আলোকচিত্রী। তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বাংলা ও ইংরেজি—দু’ভাষাতেই। উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সাময়িকী যেখানে তাঁর কবিতা ছাপা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কবিতাপাক্ষিক, টারমিনাস, ঋতবাক, Stand, Poetry Salzburg Review, The Potomac প্রভৃতি। গদ্যচর্চার ক্ষেত্রে: তাঁর ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে After the Storm, Inglenook Lit ইত্যাদি আন্তর্জাতিক পত্রিকায়।
সব্যসাচী নিয়মিতভাবে রচনা-শিল্পবিষয়ক প্রবন্ধ লেখেন Authors Publish–এ এবং পরিচালনা করেন একটি সক্রিয় সাবস্ট্যাক, যেখানে ১৩০-র বেশি সদস্য যুক্ত আছেন। তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে আরও নানা পত্রিকায়—Tint Journal, The Suburban Review, Defenestration ইত্যাদিতে।
ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রেও তাঁর কাজের পরিচিতি রয়েছে—Sanctuary Asia–এর প্রচ্ছদে ছাপা হয়েছে তাঁর ছবি। সাম্প্রতিক কালে বন্যপ্রাণীর আলোকচিত্র ছেড়ে তিনি বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন বিমূর্ত ও শিল্প-ফটোগ্রাফিতে। এ-ধরনের কাজ প্রকাশিত হয়েছে The Sunlight Press, Ink In Thirds Magazine–এর মতো পত্রিকায়।
তাঁর তেলরঙের ছবি প্রকাশিত হয়েছে The Hooghly Review, Ink In Thirds Magazine, Pink Disco ইত্যাদি সাময়িকীতে।
তাঁর লেখালিখি অনুসরণ করা যায় এখানে:
Matador:
 https://creators.matadornetwork.com/profile/e0x59k96/
Craft Essays:
 https://sabyasachiroy.substack.com/

 

সেরেস গ্ল্যাডিওলাস

অন্ধকার নেমে আসে ধীরে,

তবু পাহাড়চূড়ার আলো নিভতে চায় না—

যেন জেদি কোনো পুরনো সিনেমা হল।

 

আমি বলতে চেয়েছি-দেবতার মতো লাগছে।

আসলে মাথায় সস্তা মুকুট, আঠা এখনো ভিজে।

নীরবতা নেমে আসে, অর্কেস্ট্রা আছে, যন্ত্রগুলো নেই।

আমি গুনগুন করি, আমার গলা একাই ট্রাম্পেট।

 

ভাবো তো—ভাঙা স্যাটেলাইটের গায়ে ফোটে ফুল,

সেরেস গ্লাডিওলাস-মাধ্যাকর্ষণহীন,

যাদের ডাঁটা বাঁকতে জানে না।

এখানে যদি দেবতা থাকে, তারা আসলে দারোয়ান।

গর্তের ধুলো ঝাড়ছে,

সকাল হলেই পালা শেষ।

 

বারান্দায়

প্রতিদিন সকালে দেখি

সামনের বাড়ির বারান্দায় এক মহিলা ঝাঁট দেয়।

বারান্দা পরিষ্কার, তবু ঝাঁটা চালিয়ে যায়।

আমি জানলার ফাঁক থেকে তাকাই।

ছায়ারা ঘরে নাটক করে—দৃশ্য বিশ্বাসঘাতক।

 

একদিন চোখ তুলল। আমার দিকে।

লেখা ছিল: আবার তুমি?

আমার দৃষ্টি: অপরিশোধিত বিল।

 

ঘরটা হঠাৎ দুলল। পর্দা নড়ল। বাতাস নেই।

মনে পড়ল প্যারিস। স্যুপের বানানো গল্প।

একটা চুমু,

যেটা আমার প্রাপ্য ছিল না।

 

ঝাঁটা শব্দ তাল তোলে—

স্মরণ করায়, পুনরাবৃত্তি

প্রার্থনা? পাগলামি?

দর্শকের চোখের উপর নির্ভর।

 

অদৃশ্য হওয়ার নির্দেশ

শুরু হোক কুমড়োর বিচি দিয়ে। বুকের ভেতর ঝনঝন।

দই গিলে ফেলো। ধোঁয়া আটকে থাকুক।

কারখানার দেওয়ালে আঁকা হৃদয়ে চুমু খাও।

 

তারপর কিছু নাম মুছে ফেলো।

আপেলের নাম। প্রেমিকার দেওয়া ডাকনাম।

রাতের আগুন- তালু পুড়েছিল অচেনা কারও প্যানে।

 

একটা ঘর বেছে নাও। ধুলো ঢাকা রেখে দাও।

একটা দেহ বেছে নাও। ব্যবহার করো স্যুপের মতো।

 

কেউ যদি প্রশ্ন করে, বল—

শুধু একবারই ভালোবেসেছিলে।

হাসো। মিথ্যেবাদীর মতো।

মথ এসে বসুক কপালে—

সে বেঁচে থাকবে অক্ষত,

হেসেই।

 

 

ক্লিনিক রিপোর্ট

ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে এলাম।

পকেটে লুকোনো হরমোন। গোপন শরীর খবর।

যেন চোরাই গান বাজছে।

 

চৌকিদাররা দাঁড়িয়ে আছে। চৌকিদাররা কুয়াশা,

বন্দুক তার শ্বাস-প্রশ্বাস মাত্র।

শ্বাসে জ্বলে ওঠে অপরিচয়ের দাহ।

 

তুমি বলেছিলে—শীতের কেন্দ্র নেই, উঠে আসে স্তরে স্তরে,

সাদা হয়ে যায়, ধীরে ধীরে। কখনো গলতে চায় না।

হেসেছিলাম—ধোঁয়াকেও তো পাসপোর্ট নিতে হয়।

 

সিঁড়ির ধাপে বসি, অচেনা পথচারী

সরাসরি ভেদ করে চলে যায়,

আমরা যেন বাতাসের খসড়া, অর্ধেক মোছা অনুবাদ।

 

শেষে রয়ে যায় শুধু দেহটা—আধেক পাথর, আধেক মেঘ।

হেরে গিয়ে বেঁচে থাকা, টিকে থাকা।

 

 

 

 

ভূতের অনুবাদ

মৃতেরা আসে বাজারের ব্যাগে,

লেবেলে লেখা—আলু, চাল, তেল।

কেউ বলে ঘরে ফেরা,

আমি বলি হোম ডেলিভারি।

 

শব্দ গুলিয়ে যায়—জন্ম, বোঝা, বহন।

প্রতিটি কফিন প্রশ্নপত্র, ধাঁধা।

 

ভূতেরা কোন ভাষায় কথা বলে?

হয়তো শুধু তড়িৎঝড়ের শব্দ।

অথবা ভাঙা আয়নার প্রতিধ্বনি।

 

হয়তো, মৃত্যু আসলে ছাপাখানার ত্রুটি,

ধৈর্য পাইনি সংশোধন করবার।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *