Email: info@kokshopoth.com
August 19, 2025
অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর

বড়ো হচ্ছে ফ্লিন্ট

Apr 10, 2025

অর্দ্ধেন্দু শেখর গোস্বামীর শিম্পাঞ্জি কথা (The Chimpanzee Tales by Ardhendu Goswami)
দ্বিতীয় পর্ব

১৯৫১ সালে পশ্চিমবঙ্গের অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমতম প্রান্তের এক অজ গাঁয়ে জন্ম। সরকারি কর্মে রাজ্যের সর্বত্র বসবাস। অবসরের পর চন্দননগরে স্থিতি। বর্তমানে পূর্ণ সময়ের লেখক, সম্পাদক এবং তন্নিষ্ঠ পাঠক। আসল পরিচিতি ছড়িয়ে আছে তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিগদ্য, বিজ্ঞান-বিষয়ক সরস প্রবন্ধ এবং পুস্তক আলোচনায়। প্রকাশিত গ্রন্থঃ তফসিল(উপন্যাস), দ্রৌপদী ও পঞ্চপতির উপাখ্যান(গল্প-সংকলন), স্মরচিহ্ন(স্মৃতিগদ্য), গরিলার ঘরকন্না(বন্যপ্রাণ), ধর্ষণ-বৃত্তান্ত ইত্যাদি(গল্প-সংকলন), যেসব গল্প ছোটো থেকে বড়ো হয়(কিশোর গল্প-সংকলন), হাফ প্যাডেলের কাল(আত্মকথা), পঁচিশটি গল্প(গল্প-সংকলন), নয়নজোড়া কৌমুদী(উপন্যাসিকা-সংকলন)। সম্পাদিত গ্রন্থঃ বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া।

জেন গুডলের (Jane Goodall) ‘ফিফটি ইয়ারস অ্যাট গোম্বে’ এবং ‘ ইন দ্য শ্যাডো অব ম্যান’ বই দুটিকে আধার করে শিম্পাঞ্জিদের জীবনকাহিনী সাধারণ পাঠকদের উপযুক্ত করে লেখার চেষ্টা করছি। লেখা সম্পূর্ণ হলে তা একটি গ্রন্থের আকার নেবে।  কাহিনির ভিতর থেকে মানবের সঙ্গে তার নিকটতম জ্ঞাতির যাপনচিত্র এবং আচার-আচরণের তাৎপর্যপূর্ণ সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি পাঠকের চোখে ধরা পড়বে। পাঠকদের বোঝার সুবিধের জন্য আর একটা ব্যাপার প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার। গরিলাদের ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য জেন তাঁর ক্যাম্পের আশেপাশে কয়েকটা ভাঁড়ার স্থাপন করেছিলেন, যেখানে প্রচুর পরিমাণে কলা মজুত থাকত। কলার আকর্ষণে সারা দলটাই ঘুরেফিরে সেখানে আসত এবং অনেকটা সময় সেখানে কাটাত। সেই সুযোগে জেন তাদের আচার-আচরণ, ক্রিয়াকলাপ লক্ষ করে সেগুলো নথিবদ্ধ এবং ক্যামেরাবন্দী করতেন।  — লেখক 

বড়ো হচ্ছে ফ্লিন্ট  

সকালের নরম রোদে চিত হয়ে শুয়ে ফ্লো তার এক পায়ের আঙুলে ফ্লিন্টের ছোট্ট কবজি ধরে নিজের পেটের উপরে শূন্যে ঝুলিয়ে রেখেছে। ফ্লিন্ট তার অন্য হাতটি দোলাতে দোলাতে দু’পা দিয়ে শূন্যে লাথি ছুঁড়ে চলেছে। ফ্লো অন্য হাত দিয়ে তার পেটে আর ঘাড়ে একবার করে কাতুকুতু দিচ্ছে যতক্ষণ না সে ঠোঁট খুলে মুচকি হাসে। কাছেই ফ্লিন্টের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছে ফিফি আর মাঝে মাঝেই এক হাত বাড়িয়ে তার দশ হপ্তা বয়সি ভাইটাকে আলতো করে ছোঁয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

একটু দূরেই ফ্লোয়ের বড়ো দুই ছেলে, ফাবেন আর ফিগান খেলায় মত্ত। আড়াই মাস আগে ফ্লিন্টের জন্ম হওয়ার পর থেকেই তারা মায়ের সঙ্গে বেশি বেশি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের খেলা জমে উঠতেই সেখান থেকে শিম্প-হাসির আওয়াজ ভেসে এল। খেলতে খেলতেই হঠাৎ করে ফাবেনের খেলার ধরনটা চোয়াড়ে হয়ে উঠল। সে বসে বসে দু’পায়ের গোড়ালি দিয়ে ফিগানের নোয়ানো মাথায় আঘাত করতে শুরু করে দিল। ফিগান আর পারল না, ফাবেনকে ছেড়ে সে ফিফির কাছে এসে তার সঙ্গে খেলার জন্যে তার হাত ধরে টানাটানি করতে লাগল। সেই মুহূর্তে ফ্লিন্টকে বুকে আঁকড়ে ধরে ফ্লো গাছের ছায়ায় যাবে বলে পা বাড়িয়েছে। ফিফি ফিগানের হাত ছাড়িয়ে মায়ের পিছু পিছু চলল। পুচকি ভাইটা তাকে চুম্বকের মতো টানছে, তাকে ছেড়ে দাদার সঙ্গে খেলা করতে তার বয়েই গেছে!

ফ্লো গাছের ছায়ায় বসে ফ্লিন্টের ঘাড়ে নিজের ক্ষয়া দাঁত দিয়ে চুলকোতে শুরু করল। ফিফি তার গা ঘেঁষে বসে হাত বাড়িয়ে ফ্লিন্টকে অল্পস্বল্প চুলকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্লো যেন সেটা দেখেও দেখছে না। কিছু দিন আগেও ফিফি ফ্লিন্টকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলে ফ্লো তার হাত ঠেলে সরিয়ে দিত। ফিফি তখন করত কি – ফ্লোকে খুব করে সেবা(গ্রুম)করতে আরম্ভ করত। করতে করতে তার হাত এসে পৌঁছত ফ্লোয়ের শরীরের সেই জায়গাটায় যেখানে ফ্লিন্টের হাত মায়ের শরীর আঁকড়ে আছে। ফ্লোয়ের সেই জায়গাটায় চুলকোতে গিয়ে সে চকিতে একবার করে ফ্লিন্টের আঙুল ছুঁয়ে, মায়ের দিকে অপাঙ্গে এক ঝলক তাকিয়েই আবার মায়ের শরীরে নিজের হাত ফিরিয়ে আনত।  

এখন অবশ্য ফ্লিন্ট কিছুটা বড়ো হয়েছে। ফিফি তার গায়ে হাত ছোঁয়ালে বেশির ভাগ সময়ই ফ্লো আপত্তি করে না। এখন যেমন ফিফি ফ্লিন্টের একটা হাত ধরে তার আঙুলগুলো নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। একটু পরে ফ্লিন্ট বোধ হয় সামান্য ব্যথা পেয়ে মুখ দিয়ে অস্ফুট আওয়াজ বের করল। সঙ্গে সঙ্গেই ফ্লো ফিফির হাত সরিয়ে দিয়ে ফ্লিন্টকে বুকে চেপে ধরল। হতাশ হয়ে ফিফি নিজের মাথার পিছনে দুই হাত জড়ো করে ঝোলা মুখে এদিক ওদিক খানিক ঘুরে বেড়াল, আবার একটু পরেই এসে, এবার খুব আলতো করে ফ্লিন্টের হাত ধরল। মানবশিশুর মতোই একটি শিম্পাঞ্জি শিশুকে ক্রমশ বড়ো হয়ে উঠতে দেখা খুবই চিত্তাকর্ষক। শিশুটি যতই বড়ো উঠতে থাকে, ততোই সে কেবল তার মায়ের কাছে বা ভাইবোনের কাছে নয়, দলের অন্য সকলের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

ফ্লিন্ট যখন তিন মাসেরটি হলো সে মায়ের কোলের মধ্যেই তার লোম খামচে ধরে, পায়ের উপর ভর দিয়ে সোজা হতে শিখে গেল। এই সময়ে ফিফি তার কাছে এলেই সে সাড়া দেয়। ফিফি ক্রমশই তাকে নিয়ে মশগুল হয়ে গেল। সে বারবার চেষ্টা করে তাকে আঁকড়ে ধরে মায়ের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে। প্রথম প্রথম ফ্লো তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিত কিন্তু পরের দিকে ফিফি লাগাতার ভাইয়ের হাত ধরে টানাটানি করলেও সে তাকে ধমক টমক না দিয়ে তার হাতটা সরিয়ে দিয়ে ফ্লিন্টকে নিয়ে উঠে চলে যেত। ফিফি সেখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুলত। ফিফি যখন ভাইকে কোলে নেওয়ার জন্যে খুবই ঘ্যানঘ্যান করত, ফ্লো তখন তাকে কাছে টেনে নিয়ে গ্রুম করত কিংবা তার সঙ্গে খেলতে শুরু করে দিত। এ সবই ভাইয়ের উপর থেকে তার মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।

দিন যতো এগোয় ছেলেমেয়ের সঙ্গে খেলা করতে করতে ফ্লো ততোই খেলাধুলায় উৎসাহী হয়ে ওঠে। বিশেষ করে দুই বড়ো ছেলে ফাবেন এবং ফিগানের সঙ্গে প্রায়ই খেলায় মত্ত থাকে সে। কখনও তাদের পিছনে ধাওয়া করছে, কখনও তাদেরকে কাতুকুতু দিয়ে চলেছে, আবার কখনও বা কোনও মোটা গাছের গুঁড়িকে ঘিরে পাক খেয়ে চলেছে আর ফ্লিন্ট সর্বক্ষণই প্রাণপণে তার পেটের লোম আঁকড়ে ধরে ঝুলে আছে। একবার এই করতে করতে সে তার টাক মাথা নিচু করে হাড়সর্বস্ব পাছা উপরের দিকে তুলে ডিগবাজি খেয়ে বসল। তারপরে বোধ হয় ব্যাপারটা খুব ছেলেমানুষি হল ভেবে কাঁচুমাচু মুখে ফ্লিন্টের পরিচর্যায় মন দিল।

ফ্লিন্টের বয়স চার মাস অতিক্রম করার পরে একদিন দেখা গেল ফ্লো ফ্লিন্টকে কোলে নিয়ে ফিগানের পরিচর্যা করছে, আর ফিফি তার কাছে বসে মায়ের দিকে বারবার সতর্ক দৃষ্টিপাত করে চলেছে। একটু পরেই সে ফ্লিন্টের পা ধরে খুব সাবধানে একটু একটু করে নিজের দিকে টেনে আনতে লাগল। এই করতে করতেই দেখা গেল ফ্লিন্ট এসে গেছে তার দুই বাহুর মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে ফিফি চিত হয়ে ফ্লিন্টকে তার পেটের মধ্যে রেখে দু’হাত আর দু’পা দিয়ে তাকে জাপটে ধরে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। ফ্লো প্রথমটায় আনমনা হয়েই ছিল কিন্তু যখন ফ্লিন্ট জীবনে সেই প্রথম মায়ের কাছছাড়া হওয়ার অসহায়তা অনুভব করে কাঁদো কাঁদো মুখে ‘হু-হু’ আওয়াজ করে মায়ের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে ধরল, ফ্লো তৎক্ষণাৎ তাকে বুকের মধ্যে নিয়ে মুখ নিচু করে তার মাথায় চুমু খেল। ফ্লিন্ট মায়ের স্তন চুষল খানিকক্ষণ, তারপর আশ্বস্ত হয়ে মুখ তুলে ফিফির দিকে তাকাল। ফিফি কনুই উঁচু করে মাথার পিছনে দুই হাত রেখে ফ্লিন্টকে একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছে। মিনিট দশেক পরে একইভাবে আর একবার ফ্লিন্টকে নিজের কাছে নিল ফিফি, আবার একটু পরেই তার মুখে ‘হু-হু’ আওয়াজ শুনে ফ্লো তাকে ‘উদ্ধার’ করে আশ্বস্ত করল।

এখন থেকে প্রতিদিনই ফিফি ফ্লিন্টকে নিজের কাছে কিছুক্ষণ করে রাখে। দেখতে দেখতে সে তার দিদির কোলে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠল। তার নয় মাস বয়সের পর থেকে জঙ্গলে ঘোরার সময় ফিফির কোলেই ফ্লো তাকে ছেড়ে দিতে লাগল। তবে বড়ো দলের সঙ্গে ঘোরার সময় ফ্লো খুবই সতর্ক, ফ্লিন্টকে কিছুতেই নিজের কাছছাড়া করতে চায় না। ফিফি যদি তাকে নিয়েও নেয়, তার পিছনে ধাওয়া করে ফ্লো তার কাছ থেকে ফ্লিন্টকে কেড়ে নেয়। তবে তার জন্যে সে ফিফিকে শাস্তি দেয় না। কখনও কখনও ফ্লো তার পিছনে ধাওয়া করলে ফিফি ছোটো ছোটো গাছের ঝোপের মধ্যে কানামাছি ভোঁ ভোঁ করে পাক খেতে থাকে। তার পিছু নিতে ফ্লোকে কোথাও কোথাও হামাগুড়ি দিয়েও চলতে হয়। আবার কখনও ফিফি, মা যাতে তাকে ধরতে না পারে এমন একটা ভাব করে পিছন দিকে চলতে চলতে মায়ের গায়ের উপর এসে পড়ে। সেটা নিজেকে ধরা দেওয়ারই একটা ফন্দি। তাই বলে বাধ্য মেয়ের মতো ভাইকে মায়ের কোলে তুলে দেয় না সে, যতক্ষণ পারে তাকে আঁকড়ে ধরে রাখে।

ফ্লিন্ট যতদিন খুব ছোটো ছিল, বড়ো দুই ভাই তাকে মাঝে মাঝে চেয়ে দেখলেও তার দিকে মনোযোগ দিত না। মায়ের সঙ্গে তার গ্রুমিং চলাকালীন ফাবেন যদিও দু-একবার ফ্লিন্টকে আলতো ছুঁয়ে দিল হয়তো, কিন্তু ফিগান পরিবারের অচ্ছেদ্য অংশ হওয়া সত্ত্বেও ফ্লিন্টকে ছুঁতে ভয়ই পেত। যদি কখনও সে ও ফ্লো পরস্পরকে পরিচর্যা করাকালীন ফ্লিন্টের আঙুল তাকে ছুঁয়ে ফেলত, সে ভয়ে ভয়ে মায়ের দিকে তাকাত। যথেষ্ট জবরদস্ত কিশোর হয়ে ওঠার পরেও সে বুড়ি মাকে এতটাই সমীহ করে!

একদিনের ঘটনা বলি। ফিফি ফ্লিন্টকে নিয়ে ফ্লোয়ের দশ গজ দূরে বসে তার পরিচর্যা করে চলেছে। সেই সময় ফিগান এসে তার বোনের কাছে বসল। ফ্লিন্ট তার দিকে বড়ো বড়ো চোখ মেলে হাত বাড়িয়ে তার বুকের লোম খামচে ধরতেই সে সন্ত্রস্ত হয়ে মায়ের দিকে একবার তাকিয়েই দু-হাত উপরে তুলে একটু সরে গিয়ে বসল। সেখানে ঠোঁট চেপে স্থির হয়ে বসে রইল। একটু পরেই ফ্লিন্ট আবার গিয়ে তার বুকে একবার মুখ ঘষেই অচেনা গন্ধ পেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ফিফির দিকে মুখ ফেরাল। তারপর হতবুদ্ধি হয়ে একটা আওয়াজ করতেই তাকে উদ্ধার করতে ফিগানের দিকে ছুটে এল ফ্লো। ফিগান সঙ্গে সঙ্গে মুখে একটা করুণ আওয়াজ করে দুই হাত আরও উপরে তুলে ধরল। এইভাবে হাত তুলে আত্মসমর্পণ করা শিম্পাঞ্জি সমাজের চিরকালীন প্রথা। ফ্লো ফ্লিন্টকে নিয়ে ফিরে যেতেই খুব ধীরে ধীরে হাত নামিয়ে নিল ফিগান।

ফ্লিন্টের বয়স যখন প্রায় পাঁচ মাস, একদিন চলা শুরু করবে বলে উঠে দাঁড়াল ফ্লো। কিন্তু ফ্লিন্টকে কোলের দিকে না ঠেলে কাঁধের উপর দিয়ে পিঠের উপর চাপিয়ে নিল সে। কয়েক গজ এগোতে না এগোতেই ফ্লিন্ট পিঠ থেকে পিছলে গিয়ে মায়ের বাহু ধরে ঝুলতে লাগল। ওই অবস্থাতেই খানিক এগোল ফ্লো। তারপর তাকে কোলের দিকে, তার অভ্যস্ত জায়গায় চালান করল। পরের দিন ফ্লো যখন ক্যাম্পে এল, দেখা গেল ফ্লিন্ট তার পিঠের উপর থেকে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে। ক্যাম্প থেকে যাওয়ার আগে ফ্লো আবার তাকে পিঠের উপর তুলল। কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর ফ্লিন্ট যথারীতি পিছলে গিয়ে মায়ের বাহু ধরে একদিকে ঝুলতে লাগল। ওইভাবেই কিছুটা পথ গিয়ে ফ্লো তাকে আবার পিঠে তুলে দিল। সেদিনের পর থেকে পাহাড়ি পথে প্রায়ই ফ্লিন্টকে দেখা যেতে লাগল হয় তার মায়ের পিঠে, নয় তো তার একদিকের কনুই ধরে ঝুলন্ত অবস্থায়। মায়ের পেটের তলা থেকে পিঠের উপরে উন্নীত হওয়ার শিক্ষণ চলল বেশ কিছুদিন। ফ্লোয়ের দেখাদেখি ফিফিও এখন ফ্লিন্টকে পিঠের উপর তুলে নেয়।

পাঁচ মাস বয়স হতেই ফ্লিন্ট দিব্যি পিঠে চড়া রপ্ত করে নিল। এখন সে কদাচিৎ মায়ের পিঠ থেকে পিছলে পড়ে। যদি কখনও দলের মধ্যে কোনো উত্তেজনা দেখা দেয় অথবা ফ্লো-কে ঘন ঝোপের ভিতর দিয়ে চলতে হয়, কেবল তখন সে ফ্লিন্টকে পিঠের উপর থেকে পেটের তলায় চালান করে দেয়।

আবার এই সময় থেকেই ফ্লিন্ট এক পা এক পা করে হাঁটার চেষ্টা করতে লাগল। কয়েক সপ্তাহ আগেই দেখা যাচ্ছিল সে দু’ পা আর এক হাত মাটিতে রেখে অন্য হাত দিয়ে মায়ের লোম আঁকড়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। এক সকালে সে হঠাৎ করে মাকে ছেড়ে দিয়ে চার হাত পায়ে দাঁড়িয়ে গেল মাটিতে। তারপর ইচ্ছে করেই একটা হাত মাটি থেকে তুলে নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে থামল। এবার একটা পা মাটি থেকে তুলে নিতেই দুদিকে দুলতে দুলতে নাক থুবড়ে মাটিতে পড়ল। তার আর্তনাদ শুনে ফ্লো ছুটে এসে তাকে কোলে তুলে নিল।

সেটা ছিল শুরু। তারপর থেকে প্রতিদিনই হাঁটি হাঁটি পা পা বেশি বেশি করে চলতে লাগল। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে ফ্লিন্টের টলোমলো ভাব থেকেই গেল। হাত পা গুলোকে কিছুতেই নিজের বশে রাখতে পারে না সে আর প্রায়ই আছাড় খায়। তাই দেখে ফ্লো মাঝে মাঝেই তার পেটের তলায় হাত রেখে তাকে হাঁটানোর চেষ্টা করে।

হাঁটতে শিখেই ফ্লিন্ট এবার গাছে চড়ার চেষ্টা শুরু করে দেয়। একদিন দেখা গেল সে একটা চারা গাছ দু হাতে ধরে সোজা দাঁড়িয়ে আছে। তারপর প্রথমে একটা পা তুলে গাছের কাণ্ডে জড়াল। কিন্তু দ্বিতীয় পা-টা আর কিছুতেই তুলতে পারে না। একবার এই পা তোলে, একবার ওই পা তোলে, দুটো পা একসঙ্গে আর তুলতে পারে না। এই করতে করতে সে পিছন দিকে চিত হয়ে মাটির উপর আছাড় খায়। এরপর আবার যখন সে ওঠার চেষ্টা করে ফ্লো ফিফির পরিচর্যা করতে করতে একটা হাত ফ্লিন্টের পিঠের উপর রাখে যাতে সে আছাড় না খায়। এক সপ্তাহের চেষ্টায় ফ্লিন্ট খানিকটা উপর পর্যন্ত ওঠা রপ্ত করে ফেলল। কিন্তু নিজে নিজে নেমে আসাটা বেশি কঠিন লাগে তার। ফ্লো এবং ফিফিও, এইসময় খুব নজর রাখে তার উপর। তার মুখ থেকে ঘ্যানঘ্যানে আওয়াজ বেরোলেই কেউ না কেউ ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। কখনও দেখা যায় একটা সরু ডালের প্রান্তে চলে এসেছে ফ্লিন্ট, ডালটা নুয়ে পড়ে যে ভাঙবার উপক্রম করছে সেটা খেয়ালই নেই বাবুর; ফ্লো অমনি ছুটে গিয়ে তাকে নামিয়ে আনে। দলের মধ্যে কলহ, মারামারির উপক্রম হলেও এমনিভাবে ফ্লো তাকে নিজের কোলে টেনে নিয়ে আসে।

ক্রমশ ফ্লিন্টের হাঁটায় অনেকটা নিয়ন্ত্রণ এল, যদিও সে এখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হাঁটার চাইতে ছোটায় বেশি বিশ্বাসী। মায়ের কাছ থেকে একটু দূরে চলে যাওয়া তার কাছে খুবই লোমহর্ষক ব্যাপার। এই সময় সত্যি সত্যিই তার গায়ের লোমগুলো সব খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। দূরে গিয়ে সে যখন তার সামনে পড়া কোনো বস্তু বা প্রাণীকে বড়ো বড়ো চোখ মেলে আগ্রহের সঙ্গে দেখতে থাকে তখন দূর থেকে তাকে একটা কালো পশমের বলের মতো লাগে।

এই সময়ে ফিফি তার ভাইটিতে একেবারে মজে গেল। প্রায় সারাটা দিন তাকে নিয়ে পড়ে থাকে। কখনও তার পরিচর্যা করছে, কখনও তার সঙ্গে খেলছে, কখনও বা তাকে পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মায়ের দায়িত্ব অনেকটাই কেড়ে নেওয়ার জন্যে ফ্লো তার উপরে বিরক্ত তো নয়ই, বরং সন্তুষ্ট। সে কেবল খেয়াল রাখে যাতে সে ফ্লিন্টকে তার দৃষ্টিসীমার বাইরে না নিয়ে যায়, আশেপাশে কোনো বদমেজাজি পুরুষ না থাকে। অনান্য শিম্প ছেলেমেয়েরা ফ্লিন্টকে নরম করে আদর করতে এলেও সে আপত্তি করে না, কিন্তু ফিফি করে। যদি কখনও ওলির মেয়ে গিলকা বা অন্য কাউকে ফ্লিন্টের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে, ফিফি সঙ্গে সঙ্গে সব ফেলে রেখে ছুটে এসে তাকে তাড়িয়ে দেয়। তখন তার চেহারা হয় দেখার মতো – গায়ের লোম ফুলিয়ে, দুই বাহু নাড়িয়ে, দুই পা দিয়ে মাটিতে লাথি মারতে মারতে ধাওয়া করে তার পিছনে। তার চেয়ে বয়সে অনেক বড়ো শিম্পকেও, যদি সে ফ্লোয়ের চেয়ে উঁচু দরের কেউ না হয়, ফিফি এইভাবেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ধাওয়া করে। অর্থাৎ যদি সে রুখেও দাঁড়ায় তাহলে ফ্লো এসে তাকে রক্ষা করবে। ফিফির আক্রমণের লক্ষ্য শিম্পটিও তা বিলক্ষণ বোঝে বলে সে মানে মানে সরে পড়ে।

ফিফি কিন্তু কখনও ফাবেন বা ফিগানের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে না। ফ্লিন্ট যতো বড়ো হতে থাকে, বড়ো দুই ভাইয়ের তার প্রতি আগ্রহ ততোই বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে তারা তার সঙ্গে খেলা শুরু করে দেয়, তাকে কাতুকুতু দেয়, তার দু’হাত ধরে আলতো করে তাকে নিচু ডালের উপর তুলে দেয়। ফ্লিন্ট মজা পেয়ে দুই পা শূন্যে ছুঁড়তে থাকে। ফিগানকে ফ্লিন্টের সঙ্গে খেলতে দেখলে কখনও কখনও ফিফি ছুটে এসে ফিগানের সঙ্গে খেলা শুরু করতে চায়। অনেক সময় ফিগান ফ্লিন্টকে ছেড়ে ফিফির সঙ্গে খেলে। খেলা শেষ হলে ফিফি ফের ফ্লিন্টকে নিয়ে খেলতে থাকে। ফিফি বোধহয় এইভাবেই ফ্লিন্টের উপর থেকে ফিগানের মনোযোগ সরিয়ে দেয়; ঠিক যেভাবে ফ্লো শিশু-ফ্লিন্টের উপর থেকে ফিফির মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেই ফিফির সঙ্গে খেলা শুরু করে দিত।

ফ্লিন্ট যখন কোনো সাবালক পুরুষের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, ফিফি তার মধ্যে মাথা গলায় না। ডেভিড বা গলিয়াথ বা মাইক যেই হোক, তারা হয়তো তখন ফ্লিন্টের পিঠে আলতো করে চাপড় দিচ্ছে বা নরমভাবে জড়িয়ে ধরেছে, ফিফি তাদের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। যত দিন যায়, এইভাবেই বয়ে যাওয়া বাচ্চার মতো ফ্লিন্ট বেশি বেশি করে সকলের মনোযোগ পাবার চেষ্টা করে। একদিন ফ্লিন্ট টলোমলো পায়ে বুড়ো ম্যাকগ্রেগরের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আর সেই মুহূর্তেই ম্যাকগ্রেগর সেখান থেকে উঠে অন্য দিকে চলতে শুরু করল। হতভম্ব ফ্লিন্ট বড়ো বড়ো চোখ মেলে সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল এক মুহূর্ত, আর তারপরেই ফোঁপাতে ফোঁপাতে তার পিছনে আছাড় খেতে খেতে এগিয়ে চলল। ফ্লো তার কান্না শুনে ছুটে এসে তাকে কোলে তুলে নয়। সেই শুরু। তারপর থেকে প্রায়ই দেখা যায় ফ্লিন্ট কোনো না কোনো পুরুষের পিছনে ঘ্যানঘ্যান করতে করতে ছুটে চলেছে। কারণ সেই পুরুষটির কাছে গিয়ে দাঁড়ানো সত্ত্বেও সে তাকে আদর না করে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। অনেক সময়ই দেখা যায়, তার নরম গলার ডাক শুনে পুরুষটি ঘুরে দাঁড়াল। তারপর একটুখানি আদর করে দেওয়ার জন্যে ফ্লিন্টের কাছে ফিরে এল।

আট মাস বয়স হতেই ফ্লিন্ট এক নাগাড়ে বেশ কিছুক্ষণ সময় মাকে ছেড়ে থাকতে শুরু করল। এখন সে অনেকটা ঠিকঠাক হাঁটতে পারে আর এই সময়টা সে ফিফির সঙ্গে জোর কদমে খেলতে থাকে। দু’জনে মিলে কোনো ঘাসফড়িঙের পিছনে ধাওয়া করে কিংবা ফিফি চিত হয়ে শুয়ে তাকে হাত আর মুখ দিয়ে কাতুকুতু দিলে সে তার গায়ের উপর উঠে দাঁড়ায়।

এই সময়টা উইপোকার মরশুম। শিম্পরা উই শিকারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়। শিকারের অস্ত্র শক্ত ঘাসের ডাঁটি কিংবা খুব সরু গাছের ডাল। পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে সেটাকে উইঢিপির গর্তে ঢুকিয়ে বসে থাকে। ডাঁটি বেয়ে উইগুলো উঠতে থাকলেই সেটা গর্ত থেকে বের করে নিয়ে মহানন্দে খেতে থাকে। একদিন একটা ঢিপির পাশে গোল হয়ে বসে ফ্লো, ফিগান আর ফিফি উই ধরে ধরে খাচ্ছে। ঘণ্টা দুয়েক কেটে গেছে। ফিগান আর ফিফি অস্থির হয়ে পড়েছে, আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না তাদের। ফ্লোয়ের ছিপে পাঁচ মিনিট ছাড়া ছাড়া গোটা দুয়েক করে মাত্র উই উঠছে, তাও সে ওঠার নামটি করছে না। ফিগান এর মধ্যেই বেশ কয়েকবার নদীর দিকে যাওয়ার রাস্তাটা ধরে এগিয়েছিল, কিন্তু ফ্লো তার পিছন না নেওয়ায় প্রতিবারই ফিরে এসে মায়ের পাশে বসেছে।

ফ্লিন্ট অতশত বোঝে না। ঢিপির উপর হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে উই চোখে পড়লেই হাত দিয়ে থাবড়াচ্ছে। হঠাৎ ফিগান উঠেই ফ্লিন্টের দিকে এগিয়ে গেল। তার কাছে গিয়ে উপুড় হয়ে তাকে তার পিঠে ওঠার জন্যে অনুনয়ের আওয়াজ করতে লাগল। ফ্লিন্ট আদুরে ডাক দিতে দিতে তার গায়ের কাছে আসা মাত্র ফিগান তার একটা বাহু ধরে নিজের পিঠের উপর তুলে নিল। ফ্লিন্ট ঠিকঠাক তার পিঠে উঠে বসতেই ফ্লোয়ের দিকে একটা চকিত চাহনি দিয়েই ফিগান নদী যাওয়ার রাস্তা ধরে দ্রুত এগিয়ে চলল। একটু পরেই ফ্লো তার ছিপ ফেলে রেখে ফিগানের পিছু নিতে বাধ্য হলো।

ফিগানের বুদ্ধি দেখে অবাক না হয়ে উপায় নেই। তার দেখাদেখি ফিফিও একদিন একইভাবে ফ্লোকে উইঢিপি ছেড়ে আসতে বাধ্য করল। এমনকি, ফাবেন, যে কখনই ফ্লিন্টকে বয়ে নিয়ে যায়নি কোথাও, একদিন ফ্লিন্টকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে মাকে উইঢিপি থেকে বের করে নিয়ে আসতে সফল হলো। ফ্লোর ছেলেমেয়ের এই কৌশল সবসময় যে সফল হতো এমন নয়। কখনও ফ্লিন্ট নিজেই চেঁচিয়েমেচিয়ে দাদাদিদির পিঠ থেকে নেমে মায়ের কাছে চলে আসে। কখনও বা, বিশেষ করে ফ্লোর ছিপে যখন ভালোমতো উই উঠছে, সে নিজেই উঠে গিয়ে অপহারকের কাছ থেকে ফ্লিন্টকে উদ্ধার করে নিয়ে নিজের জায়গায় ফিরে আসে।

ফ্লোয়ের উই খাওয়ার নেশা যতই তীব্র হোক, সে ব্যাপারে ফ্লিন্ট একেবারে উদাসীন। কখনও কখনও কলা বা ডুমুর একটু আধটু মুখে দিলেও তার প্রধান খাদ্য মায়ের দুধ। আরও এক বছর সেরকমই চলবে। উইঢিপির কার্যকলাপ থেকে দুটো জিনিস সে শিখেছে। মায়ের ফেলে দেওয়া ‘ছিপ’ নিয়ে সে খেলা করে আর অন্যের দেখাদেখি সে ‘পুঁছতে’ শিখেছে। উই যখন বেশি সংখ্যায় ঢিপির উপর বেরিয়ে আসে তখন শিম্পরা তাদের বাহু দিয়ে সেগুলো ‘পুঁছে’ নেয়। অর্থাৎ, সেগুলো বাহুর লোমে আটকা পড়ে যায়। শিম্প তখন লোম থেকে ঠোঁট দিয়ে খুঁটে খুঁটে খেয়ে নেয়। ফ্লিন্ট পুঁছতে শেখার পরে উই ছাড়া বাকি সব কিছুই পুঁছতে থাকে – মাটি, পাথর, নিজের পা, মায়ের পা ইত্যাদি ইত্যাদি।

ফিফি কিন্তু খুবই আগ্রহী ‘মেছুড়ে’। ফ্লিন্ট যখন তার সঙ্গে খেলার জন্যে তার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ছিপে উঠে আসা উইদের ছত্রাখান করে দেয়, সে খুবই বিরক্ত হয়ে ওঠে। বারবার ফ্লিন্টকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। উই শিকারে মগ্ন না থাকলে অবশ্য নিজের থেকেই তার সঙ্গে খেলা করে। কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যায় ভাইয়ের প্রতি তার যে সম্মোহন, তা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে। অন্য বাচ্চারা ফ্লিন্টের সঙ্গে খেলা করতে চাইলে সে আর আগের মতো তাদেরকে বাধা দেয় না।

এইভাবে ফ্লিন্টের নিজের বন্ধুসংখ্যা বাড়তে লাগল। সে আর ফিফির পুতুল নয়, তার নিজেরও একটা স্বাধীন মন তৈরি হতে লাগল। ফিফি তাকে একদিকে নিয়ে যেতে চাইলে ফ্লিন্ট যদি অন্য দিকে যেতে চায়, তখন সে দিদির সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে তার হাত ছাড়িয়ে নিজের পথে চলে যায়। তাছাড়া ফ্লিন্ট এখন বেশ ভারী হয়ে হয়ে গেছে। একদিন সে ফিফির লোম আঁকড়ে ধরে তার কোলে ঘুমোচ্ছিল। ফিফির যে অসুবিধে হচ্ছে সেটা বোঝা গেল যখন সে সাবধানে ভাইয়ের হাত নিজের শরীর থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু সে যতই ছাড়িয়ে দেয় ফ্লিন্ট ততোই তার লোম আঁকড়ে ধরে। শেষ পর্যন্ত, সেই প্রথম বার ফিফি তাকে নিয়ে এসে তার মায়ের কোলের দিকে ঠেলে দিল।

ফ্লিন্টের যখন এক বছর বয়স হলো তখন থেকেই দলের মধ্যে তার সামাজিক মেলামেশা বাড়তে শুরু করল। সেই সময়টায় দলের মধ্যে একটা অস্থিরতা চলছে। কারণ মাইক সদ্য সদ্য নাটকীয়ভাবে গলিয়াথের কাছ থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়েছে কিন্তু তাদের মধ্যে এখনও একটা ‘মানসিক লড়াই’ চলছে।